কোরআনের আলোকে ভ্রূণতত্ত্ব

মানব সন্তান (অংকুরিত ভ্রূণ) মাতৃজঠরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং বিভিন্ন স্তর বা পর্যায় অতিক্রম করে ভূমিষ্ঠ হয়। এ বিষয়টি বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে। অথচ পবিত্র কোরআনুল কারিমে এর বিশদ বিরণ দেয়া হয়েছে এটি আবিষ্কারের প্রায় ১৩০০ বছর আগে। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে মহান আল্লাহপাক বলেন, ‘অতঃপর আমি তাকে বিন্দুরূপে এক সুরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।’

 ‘অতঃপর আমি ওই বিন্দুকে এমন কিছুতে পরিণত করি, যা জোঁকের মতো দৃঢ়ভাবে (জরায়ুর সঙ্গে) আটকানো থাকে।’

 ‘অতঃপর আমি জোঁকের মতো দৃঢ়ভাবে আটকানো ভ্রূণটাকে চিবানো গোশতের মতো মাংসপিণ্ডে পরিণত করেছি।’

 ‘অতঃপর আমি চিবানো গোশতের মতো মাংসপিণ্ড থেকে হাড়সমূহ সৃষ্টি করেছি।’

 ‘অতঃপর তা অক্ষত মাংস দিয়ে ঢেকে দেই; শেষে তাকে গড়ে তুলি এক নতুন সৃষ্টিরূপে।’

এভাবে মাতৃগর্ভে সন্তান উৎপাদনের পর্যায়ক্রম সম্বন্ধে কোরআন ও হাদিসে যেসব বিবরণ রয়েছে, কিছুদিন আগেও ভ্রূণ বিজ্ঞান তা জানত না। অথচ এসব বিবরণ মানব ভ্রূণের পর্যায়ক্রম সম্বন্ধে যে সর্বশেষ বর্ণনা দিয়েছে প্রাচীনকালে বৈজ্ঞানিকভাবে তা ছিল অজানা। প্রকৃতপক্ষে ভ্রূণের শ্রেণীবিভাগের ক্ষেত্রে কোরআনের রীতি বিস্ময়কর, কেননা এটি সপ্তম শতাব্দীতে নাজিল হয়েছে। তাছাড়া মানব ভ্রূণের প্রাথমিক অবস্থায় এত ক্ষুদ্র আকৃতির থাকে যে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এর বিস্তারিত গবেষণা ছিল অসম্ভব।

কানাডারবিজ্ঞানী টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড· কেইথ এল মুর কোরআনে মানব ভ্রূণের এ বিষয়টি পর্যালোচনা করে বলেন, ‘অবশ্যই এই গ্রন্থ কোন মানুষের রচনা হতে পারে না। কারণ, ভ্রূণের ক্রমবিবর্তন কেবল ১৯৪০ সালের দিকে ধারণা করা হচ্ছিল। মাইক্রোস্কোপ আবিষ্কার করার শত শত বছর আগেই কি করে সম্ভব হল কোরআনে ভ্রূণের এত নিখুঁত বর্ণনা দেয়া? এমনকি এই যন্ত্র আবিষ্কারের পরও বিজ্ঞানীরা এত নিখুঁত ও স্পষ্টভাবে ভ্রূণের বর্ণনা দিতে পারেননি।’

ভ্রূণতত্ত্বেরওপর ড·মুরেরবিখ্যাত একটি বই আছে, যা আটটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। পবিত্র কোরআন পড়ে তিনি তার বইতে বেশ কিছু সংশোধন আনেন। মায়ের গর্ভে মানুষের বিবর্তনের বর্ণনা পবিত্র কোরআনে যেভাবে আছে, তা তিনি তার বইতে সংযোজন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি কমিটি এ বইকে সেরা বই হিসেবে বর্ণনা করেছে। এনাটমির ক্ষেত্রে কানাডার সর্বোচ্চ পুরস্কার জেসিবি পদক তিনি পেয়েছেন।

অমুসলিম এই বিজ্ঞানী পবিত্র কোরআনের আয়াতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে অভিভূত হন এবং কায়রোর চিকিৎসা সম্মেলনে পবিত্র কলেমা উচ্চারণ করে মুসলমান হয়ে যান।


হাবিবুররহমান সরকার

যুগান্তর, ১১ এপ্রিল ২০০৮