জীব-জন্তু সৃষ্টিতে আল্লাহর নিপুন সৃষ্টি কৌশল

বিচিত্র এ জগৎ তারচেয়েও বিচিত্র এ জগতের মানুষ, প্রাণিকুল ও জীবজন্তু। আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি মানুষ। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত- সৃষ্টির সেরা। বিভিন্ন বর্ণ, ধর্ম এবং গোত্রের মানুষ ও জীবজন্তুর দ্বারা এ জগৎ পরিপূর্ণ।

পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন যাতে কোন কোনটিকে বাহন হিসাবে ব্যবহার কর এবং কোন কোনটিকে ভক্ষণ কর। এতে তোমাদের জন্য অনেক উপকারিতা রয়েছে। আর এ জন্য সৃষ্টি করেছেন যাতে সেগুলোতে আরোহণ করে তোমরা তোমাদের অভিষ্ট প্রয়োজন পূর্ণ করতে পার। এগুলোর ওপর এবং নৌকার উপর তোমরা বাহিত হও, তিনি তোমাদেরকে তার নিদর্শন দেখান। অতএব, তোমরা আল্লাহর কোন কোন নিদর্শনকে অস্বীকার করবে’। ৪০:৭৯-৮১। ‘তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থ ব‘ থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে প্রচুর উপকারিতা আছে, তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর। তাদের পিঠে জলযানে তোমরা আরোহণ করে চলাফেরা করে থাক।’ ২৩:২১-২২

পবিত্র কোরআন-এর বহু জায়গায়, প্রসঙ্গক্রমে পুনঃপুনঃ জীবজন্তু ও প্রাণীকুলের কথা এসেছে। প্রায় প্রতি জায়গায়ই এসব জীবজন্তু সৃষ্টিতে আল্লাহর নিপুণ সৃষ্টি কৌশল প্রক্রিয়া পরিব্যক্ত হয়েছে এবং প্রায় সাথে সাথেই প্রকাশ করা হয়েছে যে, এসব বিষয় হল নিদর্শন তাদের জন্য যারা চিন্তাশীল।

সমস্ত জীবজন্তু ও প্রাণীকুলকে অর্থ করতে বাহিমাত, আন’আম, দাব্বাত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় বিশেষ বিশেষ জীবজন্তু ও প্রাণীর নাম উল্লেখপূর্বক নির্দেশিত হয়েছে। বক্ষ্যমান নিবন্ধে কোন্‌ অবস্থায় এবং কোন্‌ প্রেক্ষাপটে পবিত্র কোরআনে এ বিশেষ বিশেষ জন্তুর নামগুলো এসেছে তারই এক সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রথমে জন্তুগুলোর বাংলা নাম, এরপর এর আরবী প্রতিশব্দ এবং পরবর্তীতে কোন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। জন্তুর নাম উল্লেখে পবিত্র কোরআনে সূরার ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা হয়েছে- তবে একই নাম যেখানে পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে, সেখানে যথাযথ স্থানে তার বিশেস্নষণ দেয়া হয়েছে।

বানর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সূরায় শব্দটি এসেছে। সূরাগুলো হলো- সূরা বাকারা, সূরা মায়েদা ও সূরা আ’রাফ।

‘তোমরা তাদেরকে ভালরূপে জেনেছ, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালংঘন করেছিল। আমি বলেছিলামঃ তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।’ ২ঃ৬৫

‘যাদের কতেককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন।’ ৫:৬০

হযরত দাউদ (আঃ) এর সময় সংঘটিত বনি ইসরাঈল কতৃêক এক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা প্রসঙ্গে ‘বানর’ কথাটি পবিত্র কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে। বনি ইসরাঈলের জন্য শনিবার ছিল অতি পবিত্র এবং সাপ্তাহিক উপাসনার জন্য নির্ধারিত দিন। এদিনে মৎস্য শিকার তাদের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ। এদিনে সমুদ্রোপকূলের জলাভূমিতে প্রচুর মৎস্যের সমাগম হত। বনি ইসরাঈলীগণ ঐ দিন মৎস্য শিকারের জন্য এক ফন্দি বের করে- তারা শনিবারে মৎস্য সমাগমের জলাভূমি আবদ্ধ করে রাখে এবং পরেরদিন তা ধরে আনে। তাদের এ অপকৌশলের কারণে আল্লাহ শাস্তি স্বরূপে তাদেরকে নিকৃষ্ট বানরে রূপান্তরিত করেন।

এ বিষয়টি সূরা আ’রাফ-এ আরো বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ ‘আর তাদের কাছে সে জনপদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর যা ছিল নদীর ওপর অবস্থিত। যখন শনিবার দিনের নির্দেশ ব্যাপারে সীমাতিক্রম করতে লাগল, যখন আসতে লাগল মাছগুলো শনিবার দিন পানির ওপর, আর যেদিন শনিবার হত না, আসত না। এভাবে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। কারণ তারা ছিল নাফরমান।’ ‘তারপর যখন তারা এগিয়ে যেতে লাগল সে কর্মে যা থেকে তাদের বারণ করা হয়েছিল, তখন আমি নির্দেশ দিলাম যে, তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।’ সূরা আ’রাফ ১৬৩, ১৬৬।

গরু পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন সূরায় বিভিন্ন প্রসঙ্গে গরু, গাভী, গো-বৎস্য বাছুর প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরাগুলো হলো-সূরা বাকারা, সূরা নিসা, সূরা মায়েদা, সূরা আন’আম, সূরা আ’রাফ, সূরা হুদ, সূরা ইউসুফ, সূরা নাহল, সূরা তা’হা, সূরা যারিয়াত, সূরা আবাসা, ‘আর আমি যখন মূসার সাথে ওয়াদা করেছি চল্লিশ রাত্রির অতপর তোমরা গো-বৎস বানিয়েছ মূসার অনুপস্থিতিতেঃ’ ২ঃ৫১

‘আর যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদেরই ক্ষতিসাধন করেছ এই গো-বৎস নির্মল করেঃ’ ২ঃ৫৪

জবেহ করার জন্যে নির্দেশিত ‘গরু’-এর স্বরূপ কি হবে এ নিয়ে ইহুদীগণ হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে তর্ক জুড়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের বর্ণনাঃ

‘যখন মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ আল্লাহ তোমাদের একটি গরু জবাই করতে বলেছেনঃ তারা বলল, তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, যেন সেটির রূপ বিশেস্নষণ করা হয়। মূসা (আঃ) বললেন তিনি বলেছেন, সেটা হবে একটা গাভী যা বৃদ্ধ নয় এবং কুমারীও নয়- বার্ধক্য ও যৌবনের মাঝামাঝি বয়সের। এখন আদিষ্ট কাজ করে ফেল। তারা বলল, তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্যে প্রার্থনা করতে, তার রং কিরূপ হবে? মূসা (আঃ) বললেন, তিনি বলেছেন যে, গাঢ় পীতবর্ণের গাভী- যা দর্শকদের চমৎকৃত করবে। তারা বলল, আপনার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন- তিনি বলে দিন যে, সেটা কিরূপ?ঃমূসা (আঃ) বললেন, তিনি বলেন যে, এ গাভী ভূকর্ষণ ও জলসেচনের শ্রমে অভ্যস্ত নয়- হবে নিষ্কলংক, নিখুঁত। তারা বলল, এবার সঠিক তথ্য এনেছ। অতঃপর তারা সেটা জবাই করল, অথচ জবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না। যখন তোমরা একজনকে হত্যা করে পরে সে সম্পর্কে একে অপরকে অভিযুক্ত করেছিলে। যা তোমরা গোপন করেছিলে, তা প্রকাশ করে দেয়া ছিল আল্লাহর অভিপ্রায়। অতঃপর আমি বললামঃ গরুর একটি খণ্ড দ্বারা মৃতকে আঘাত কর। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদেরকে তার নিদর্শন প্রদর্শন করেন- যাতে তোমরা চিন্তা কর।’ সূরা বাকারা ৬৭-৭৩

আহলে কিতাবধারীগণ এর নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ নিদর্শন আসার পরও তারা গো বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে ২ঃ৫১ এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন-এর উল্লেখঃ ‘ঃ•ব‘ত এরা মূসা (আঃ)-এর কাছে এরচেয়েও বড় জিনিস চেয়েছে। বলেছে, একেবারে সামনা-সামনিভাবে আমাদের আল্লাহকে দেখিয়ে দাও। অতএব তাদের ওপর বজ্রপাত হয়েছে তাদের পাপের দরুন, অতঃপর তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ নিদর্শন প্রকাশিত হবার পরও তারা গো বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল, তাও আমি ক্ষমা করে দিয়েছি এবং আমি মূসাকে প্রকৃষ্ট প্রভাব দান করেছিলাম।’ ৪ঃ১৫৩

‘তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে, যা তোমাদের কাছে বিবৃত হবে তা ব্যতীত। কিন্তু এহরাম বাঁধা অবস্থায় শিকারকে হালাল মনে করো না। নিশ্চয় আল্লাহতা’য়ালা যা ইচ্ছা করেন নির্দেশ দেন।’ ৫ঃ১।

চতুষ্পদ জন্তুর জন্য আনআম ও বাহিমাত, শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘আন’-‘আম’ শব্দ দ্বারা উট, গরু, মেষ, ছাগল এবং অন্যান্য অহিংস্র ও রোমন্থনকারী জন্তুকে বুঝায়, যথা-হরিণ, নীল গাই, মহিষ ইত্যাদি। তবে ঘোড়া, গাধা-এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

‘তিনি সৃষ্টি করেছেন চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে বোঝা বহনকারীকে এবং খর্বাকৃতিকে। আল্লাহ তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন, তা থেকে খাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রম্ন। ৬ঃ১৪২ এখানে শয়তানের পদাংক অনুসরণ বলতে জালেমদের নিজদের মনগড়া হালাল-হারাম নির্ধারণ করা এবং দেবতাদের উদ্দেশ্যে জন্তুকে নৈবেদ্য হিসাবে গ্রহণ করাকে অর্থ করা হয়েছে। টীকা নং ৪৪২ পবিত্র কোরআনুল করীম ই,ফা পৃঃ ২১৮। যে সকল পশুকে তারা খেয়াল-খুশিমত হালাল-হারাম করে থাকে তা আট প্রকারঃ মেষের দু’টি (নর-নারী), ছাগলের দু’টি, উটের দু’টি এবং গরুর দু’টি- সূত্র পবিত্র কোরআনুল করীম ৬ঃ১৪৩-১৪৪

‘ইহুদীদের জন্য আমি প্রত্যেক নখবিশিষ্ট জন্তু হারাম করেছিলাম এবং ছাগল ও গরু থেকে এতদুভয়ের চর্বি আমি তাদের জন্য হারাম করেছিলাম, কিন্তু ঐ চর্বি যা পৃষ্ঠে কিংবা অন্ত্রে সংযুক্ত থাকে অথবা অস্থির সাথে মিলিত থাকে। তাদের অবাধ্যতার কারণে আমি তাদেরকে এ শাস্তি দিয়েছিলাম। আর আমি অবশ্যই সত্যবাদী ৬ঃ১৪৬। হিংস্র জন্তু ও পাখি এসব নখযুক্ত জন্তু এবং উট ইহুদীদের জন্য অবৈধ। গো-ছাগলে উদরস্থ যা তাদের অভক্ষ তবে, অন্ত্র ও অস্থির সঙ্গে সংযুক্ত চর্বি বৈধ। তফসীর হোসেনীঃ•৫৮।

বৃদ্ধ বয়সে ইব্রাহিম (আঃ) বিবি সারা এক পুত্র সন্তান লাভ করতে যাচ্ছেন এ শুভ সংবাদ নিয়ে ফেরেশতাগণ মানবাকৃতি ধারণ করে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর গৃহে আগমন করেন- হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাদেরকে আগন্তুক মনে করে তাদের আপ্যায়নের জন্যে একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে আসেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন-এর উল্লেখ ‘আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতা ইব্রাহিমের নিকট সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল, তারা বলল-সালাম তিনিও বললেন- সালাম। অতঃপর অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন।’ ১১ঃ৬৯

মিশরের বাদশা আযীয স্বপ্ন দেখেনঃ সাতটি মোটাতাজা গাভী এদেরকে সাতটি শীর্ণ গাভী খেয়ে যাচ্ছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অন্যগুলো শুষ্ক। এ স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য বাদশা তার পারিষদদের আহ্বান জানালেন। হযরত ইউসূফের সাথে কারারুদ্ধ মুক্তিপ্রাপ্ত সাথী জানায় যে, সে হযরত ইউসূফ-এর নিকট থেকে এ স্বপ্নের তা’বীর নিয়ে আসতে পারবে। শেষ পর্যন্ত তা-ই করা হল। সমগ্র বিষয়টি পবিত্র কোরআন-এ বর্ণিত হয়েছে নিম্নরূপঃ বাদশা বলল, ‘‘আমি স্বপ্নে দেখলাম সাতটি মোটাতাজা গাভী এদেরকে সাতটি গাভী খেয়ে যাচ্ছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অন্যগুলো শুষ্ক। ‘ হে পারিষদবর্গ তোমরা আমাকে আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বল, ‘‘যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যায় পারদর্শী হয়ে থাক।” ১২ঃ৪৩

গাভী দুগ্ধ সম্বন্ধে পবিত্র কোরআন-এর বর্ণনাঃ ‘তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তদের (আন’আম) মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমি তোমাদের পান করাই তাদের উদরস্থিত ব‘সমূহের মধ্যে থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্যে উপাদেয়।’ ১৬ঃ৬৬

খাদ্য হিসাবে গরু প্রসঙ্গে বর্ণিতঃ ‘তোমরা আহার কর এবং তোমাদের চতুষ্পদ জন্তু (আন’আম) চরাও। নিশ্চয় এতে বিবেকবানদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’ ২০ঃ৫৪

হযরত মূসা (আঃ)-এর অনুপস্থিতিতে বনি ইসরাঈল-এর সামেরী নামক জনৈক ব্যক্তি একটি গো-বৎসের মূর্তি বানিয়ে একে মিথ্যে উপাস্য নির্ধারণ করে পবিত্র কোরআনে উল্লেখঃ অতঃপর সে তাদের জন্য তৈরি করে বের করল একটা গো-বৎস একটা দেহ, যার মধ্যে গরুর শব্দ ছিল। তারা বলল, এটা তোমাদের উপাস্য এবং মূসারও উপাস্য, অতঃপর মূসা ভুলে গেছে। তারা কি দেখে না যে, এটা তাদের কোন উত্তর দেয় না এবং তাদের কোন ক্ষতি ও উপকার করার ক্ষমতা রাখে না? ‘তোমাদের ইলাহ তো কেবল আল্লাহ-ই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। সব বিষয় তার জ্ঞানের পরিধিভুক্ত।’ ২০ঃ৮৮-৮৯, ৯৮

হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর নিকট মানবাকৃতিতে আগত ফেরেশতাদের আপ্যায়নের জন্য মাংসল গো-বৎস প্রসঙ্গ যা পূর্বে বর্ণিত হয়েছে এবং পবিত্র কোরআন-এর ৫১ঃ২৬ আয়াতেও এর পুনঃউল্লেখঃ ‘অতঃপর ইব্রাহিম তার স্ত্রীর নিকট গেল এবং একটি মাংসল গো-বৎস ভাজা নিয়ে এল।’

গবাদির খাদ্য হিসাবে ঘাস এবং মানুষের উপকারার্থে চতুষ্পদ জন্তু (গাভী)-এর প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন-এর ২৪, ৩১-৩২ আয়াতঃ মানুষ তার আহার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করুকঃ আমি এতে উৎপন্ন করি ‘ফল ও গবাদি খাদ্য। তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুদের উপকারার্থে।

শূকর এর উল্লেখ রয়েছে সূরা বাকারা, সূরা মায়েদা ও সূরা নাহলে।

যে সমস্ত জীবজন্তু ভক্ষণ করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা হারাম তার মধ্যে শূকর মাংস প্রধান। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন-এর উল্লেখঃ ‘নিশ্চয় আল্লাহ মৃত জন্তু, রক্ত এবং শূকর মাংস এবং যার ওপর আল্লাহর নাম ব্যতীত অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে তা তোমাদের জন্যে হারাম করেছেনঃ•’ ২ঃ১৭৩

‘তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত এবং আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে ব্যবহ্নত পশুঃ•’ ৫ঃ৩

যাদের ওপর আল্লাহর লা’নত ও অভিসম্পাত তাদেরকে নিকৃষ্ট বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করার কথা উল্লেখিত হয়েছে, যেমন-‘যাদের প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন যাদের প্রতি তিনি ক্রোধাম্বিত হয়েছেন যাদের কতেককে তিনি বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করে দিয়েছেনঃ’ ৫ঃ৬০

‘অবশ্য আল্লাহ তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন রক্ত, শূকরের মাংস এবং যা জবেহকালে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়েছেঃ’ ১৬ঃ১১৫

বর্ণনা রয়েছে সূরা মায়েদায়

হযরত আদম (আঃ)-এর তনয় কাবিল ও হাবিল। তৎকালীন প্রথানুসারে হাবিল-তার জন্যে নির্ধারিত কাবিল-এর যমজ সহোদরা সুন্দরী আকলিমাকে বিয়ে করতে চাইলে কাবিল এতে বাধা দেয় এবং কাবিল-এর জন্যে নির্ধারিত হাবিল-এর যমজ সহোদরা অসুন্দর লিমুজাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে এবং স্বীয় যমজ-সহোদরা রূপসী আকলিমাকে বিয়ে করতে উদ্যোগ নিলে কলহের সৃষ্টি হয় এবং এরই সূত্র ধরে পরিণামে কাবিল স্বীয় ভ্রাতা হাবিলকে প্রস্তারাঘাতে হত্যা করে। হত্যা করার পর লাশ বা শবদেহ কিভাবে লুকাবে তা নিয়ে যখন অস্থিরতায় ভুগতে থাকে তখন আল্লাহ ‘কাক’ প্রেরণ করে এর উপায় বাতলিয়ে দেন। পবিত্র কোরআন-এর বর্ণনা, ‘‘অতঃপর তার অন্তর তাকে ভ্রাতৃ হত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। আল্লাহ এক কাক প্রেরণ করলেন। সে মাটি খনন করছিল- যাতে তাকে শিক্ষা দেয় যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ কিভাবে আবৃত করবে। সে বলল, আফসোস আমি কি এ কাকের সমতুল্যও হতে পারলাম না যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ আবৃত করি। অতঃপর, সে অনুতাপ করতে লাগল।” ৫ঃ৩০

ছাগল-এর উল্লেখ রয়েছে সূরা আন’আমের ১৪৬ নম্বর আয়াতে।

‘‘ইহুদীদের জন্যে আমি প্রত্যেক নখর বিশিষ্ট জন্তু হারাম করেছিলাম এবং ছাগল ও গরু থেকে এতদুভয়ের চর্বি আমি তাদের জন্যে হারাম করে দিলাম। কিন্তু চর্বি, যা পৃষ্ঠে কিংবা অস্ত্রে সংযুক্ত থাকে অথবা অস্থির সাথে মিলিত থাকে। তাদের অবাধ্যতার কারণে আমি তাদেরকে এ শাস্তি দিয়েছিলাম। আর আমি অবশ্যই সত্যবাদী।” ৬ঃ১৪৬

‘উষ্ট্র’ সম্বন্ধে বহু সূরার আয়াতে এবং উষ্ট্র-এর সাথে সম্পৃক্ত বহু ঘটনাবলী পবিত্র কোরআন-এ পরিব্যক্ত হয়েছে; সূরাগুলো হলো- সূরা আ’রাফ, ৭৩, ৭৭ সূরা আনফাল , ৪২ সূরা হুদ , ৬৪, ৬৫ সূরা বনি ইসরাঈল, ৫৯ সূরা হাজ্জ, ২৭, ৩৬ সূরা আরা, ১৫৫, ১৫৭, সূরা কামার, ২৭ সূরা হাশর, ০৬ সূরা মুরসালাত, সূরা তাকভীর, সূরা গাশিয়া ও সূরা শামস।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন-এর সুস্পষ্ট বর্ণনাঃ ‘‘সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহকে। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায় তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একটি প্রমাণ এসে গেছে। এটি আল্লাহর উষ্ট্রী- তোমাদের জন্যে প্রমাণ। অতএব তোমরা একে ছেড়ে দাও, আল্লাহর ভূমিতে চড়ে বেড়াবে, একে অসৎভাবে স্পর্শ করবে না। অন্যথায় তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পাকড়াও করবে।ঃ• অতঃপর তারা উষ্ট্রীকে হত্যা করল এবং স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তারা বলল, হে সালেহ, নিয়ে এস যার দ্বারা আমাদেরকে ভয় দেখাতে, যদি তুমি রাসূল হয়ে থাক। অতঃপর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে সকাল বেলায় নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।” ৬:৭৩, ৭৭। (অসমাপ্ত)দৈনিক ইত্তেফাক, ১১ জুলাই, ২০০৮