মানব জীবনকে সহজ, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও গতিময় করতে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞান হলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার দ্বারা লব্ধ প্রণালীবদ্ধ জ্ঞান। কোরআন ও হাদিসের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা ও অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে ‘তারা কি চিন্তা করে না? তারা কি গবেষণা করে না?’ বিজ্ঞানকে ইসলাম স্বাগত জানায়। সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন ও মানব সেবার জন্য গবেষণা প্রশংসার বিষয়। উপরন্তু নেক নিয়তের জন্য প্রতিদানও মিলবে। বিজ্ঞান যত উন্নত হবে আল্লাহর কুদরতও তত প্রকাশ পাবে।
পার্থিব জীবনের উন্নতিকল্পে সার্বিক বিষয়ের গবেষণার পাশাপাশি সুস্হ সবল থেকে আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা অপরিহার্য। ইসলাম এ বিষয়কে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন ‘আল্লাহতায়ালা প্রতিষেধক ব্যতীত কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, রোগে উপযোগী প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হলে আল্লাহর ইচ্ছায় তা নিরাময় হয়।’ (মুসলিম) ইরশাদ হয়েছে ‘তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন’ (বাকারা ২৯) আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন বস্তুর মাঝে নানা উপযোগ সৃষ্টি করে রেখেছেন। মানুষকে গবেষণা করে তার ব্যবহার পদ্ধতি বের করে নিতে হবে। বিজ্ঞান সমৃদ্ধ হয়ে এ বিষয়টি সহজ হয়ে গিয়েছে। অনুরুপভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞান যত উন্নত হবে মানব সেবা তত নিশ্চিত হবে। সমাজের গবেষক চিকিৎসক শ্রেণী নানাভাবে মানব সেবা করে যাচ্ছেন, এজন্য তারা সাধুবাদ গ্রহণের পাশাপাশি সৎ নিয়ত ও আন্তরিকতা দ্বারা বাহ্যত দুনিয়ার কাজগুলোকেও দ্বীনী কাজে বানিয়ে নিতে পারেন।
বিজ্ঞান চিকিৎসাকে অকল্পনীয় সহজ করে দিয়েছে। আল্লাহর বিশেষ রহমতে মুষ্টিমেয় কিছু দুরারোগ্য ব্যাধি ছাড়া সব রোগের চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তার বিধি-নিষেধের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। বিশেষ করে ওষুধ প্রয়োগ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন ‘আল্লাহ সব রোগের প্রতিষেধক সৃষ্টি করেছেন, সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর এবং চিকিৎসা গ্রহণে হারাম বস্তু ও পন্হাকে বর্জন কর’। (আবু দাউদ) এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সুবিবেচনা কাম্য। অবশ্য অনন্যোপায় হলে জীবন রক্ষার্থে হারাম বস্তুও প্রয়োজন মতো হালাল হিসেবে গণ্য হয়।
সম্প্রতি চিকিৎসা বিজ্ঞানে রক্তের ব্যবহার ব্যাপক। রক্ত দান এবং গ্রহণের আগে শরঈ সিদ্ধান্ত জেনে নিলে আমলে আগ্রহ জাগবে। জীবন রক্ষায় রক্ত অপরিহার্য উপাদান। রক্ত শুন্যতার জন্য রক্ত গ্রহণের যেমন বিকল্প নেই তদ্রুপ রক্তের চাহিদা পুরণের জন্য রক্ত দেয়ার ও বিক্রয় বৈধ নয়। তবে বিনামুল্যে রক্ত না পেলে রোগীর জন্য রক্ত ক্রয় করা বৈধ, কিন্তু এতে বিক্রেতা গুনাহগার হবে। ডাক্তারি গবেষণা মতে সুস্হ-সবল মানুষ তিন মাস অন্তর অন্তর রক্ত দান করতে পারে, এতে শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন ‘তোমাদের কেউ তার অপর ভাইয়ের উপকার করতে সক্ষম হলে সে যেন তা করে’। (মুসলিম)। তাই আমার রক্তের বিনিময়ে এক ভাইয়ের জীবন রক্ষা পেলে আগ্রহ চিত্তেই তা দেয়া উচিত। রক্তের সিমাহীন চাহিদা পুরণের জন্য ব্লাড ব্যাংকের ব্যবস্হা করা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসুচি গ্রহণ করা একটি কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে। নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এ বিষয়ক প্রচার, সেমিনার এবং ব্লাড ডোনেশন ডে’র মতো সচেতনতামুলক পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। আমার দেশ, ৬ জুন ২০০০৮