ভূপৃষ্টে মানুষের অস্তিত্বের প্রথম দিন থেকেই তারা প্রকৃতিকে বুঝতে চেয়েছে, সৃষ্টি পরিকল্পনায় নিজেদের মর্যাদা এবং জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সত্য ধারাবাহিকতায় শত শত বছরব্যাপী বিভিন্ন সভ্যতার মধ্য দিয়ে সুসংবদ্ধ ধর্ম মানবজীবনকে সুসংগঠিত এবং ইতিহাসের গতি নির্ধারণ করেছে। কিছু ধর্ম তো লিখিত পুস্তক আকারে আছে এবং অনুরাগীরা সে গুলোকে ঐশী প্রত্যাদেশ হিসেবে দাবী করে।আর কিছু ধর্ম আছে যেগুলো কেবল মাত্র মানবিক অভিজ্ঞতার ফসল। ইসলামী বিশ্বাসের মূল উৎস হচ্ছে, আল-কোরাআন। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে,এটা আল্লাহ পক্ষ থেকে এসেছে এবং তা গোটা মানব জাতির জন্য হেদায়েত। কোরআন যেহেতু সকল যুগের জন্য,তাই তা সকল যুগের জন্যই সামঞ্জস্যপণ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে,কোরআন কিসে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আমি এ পুস্তিকায় কোরআনের ঐশী উৎসের আলোকে প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নিরীখে মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাসের বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা দিতে চাই। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে এমন সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন ‘অলৌকিকতা’ অথবা ‘অনুভূত অলৌকিকতা’ মানবিক যুক্তি ও কারণের উপর অগ্রগণ্য ছিল। ‘অলৌকিকতা’র সাধারন সংজ্ঞা হল, যা স্বাভাবিক নিয়ম বহিভূর্ত এবং মানুষের কাছে যার কোন ব্যাখ্যা নেই। কোন ‘অলৌকিক’ বিষয়কে গ্রহণ করার আগে আমাদেরকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। ১৯৯৩ সনে মোম্বাই থেকে প্রকাশিত‘The Times of india’পত্রিকা লিখেছে,‘বাবা পাইলট’ নামক এক ব্যক্তি পানির রিজার্ভারের নীচের একাধারে তিন্তদিন ও রাত কাটানোর দাবী করে। সাংবাদিকরা সে রিজার্ভারটির তলদেশ পরীক্ষার দাবী জানালে সে তাদেরকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। তার যুক্তি ছিল,যে মা সন্তান প্রসব করে, সে মায়ের পেট কিভাবে পরীক্ষা করা যায়? এখানে ‘সাধু’ ব্যক্তিটি অবশ্যই কিছু লুকানোর চেষ্টা করেছে। সে আত্ম প্রকাশের লক্ষ্য প্রতারণার কৌশল গ্রহণ করেছে। কোন আধুনিক ব্যক্তি কিংবা সামান্যতম যৌক্তিক চিন্তার অধিকারী লোকও এ জাতীয়‘অলৌকিকতা'কে গ্রহণ করতে পারেনা। এজাতীয় মিথ্যা অলৌকিকতা যদি ঐশী পরীক্ষা হয় তাহলে,বিশ্বের যাদু কৌশল ও মিথ্যার রূপকার প্রসিদ্ধ যাদুকরদেরকে সত্যিকার আল্লাহভক্ত মানুষ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। ঐশী গ্রন্থ অবশ্যই অলৌকিক হবে। এজাতীয় দাবী যুগের অবস্থাভেদে পরীক্ষাযোগ্য হওয়া উচিত। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে,কোরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবতার প্রতি দয়া হিসেবে নাযিলকৃত সর্বশেষ গ্রহ্ন যা অলৌকিকতার সেরা। এখন আমার এই বিশ্বাসের যথার্থতা পরীক্ষা করে দেখবো।
সকল সংস্কৃতিতে,সাহিত্য ও কবিতা মানুষের ভাব প্রকাশ ও সৃজনশীলতার হাতিয়ার। সাহিত্য ও কবিতা বিশ্বে এক সময় গর্বের মর্যাদা লাভ করেছিল যা বর্তমান যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি লাভ করেছে।
এমনকি অমুসলিম পন্ডিতেরা পর্যন্ত স্বীকার করেছে যে, কোরআন হল সর্বোৎকৃষ্ট আরবী সাহিত্য। ভূপ্রষ্ঠে এর চাইতে শ্রেষ্ঠ সাহিত্য দ্বিতীয়টি নেই। কোরআন মানবজাতিকে এরূপ গ্রন্থ আবিষ্কারের চ্যালেঞ্জ দিয়েছে।
আল্লাহ বলেনঃ
‘আমি আমার বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি, এ বিষয়ে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে,তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস।আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাহায্যকারীদেরকেও সাথে নাও- যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।আর যদি তা না পার,অবশ্য তোমরা তা কখনও পারবেনা,তাহলে,সে দোযখের আগুন থেকে পানা চাও,যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। সূরা বাকারা-২৩-২৪
কোরআন তার যে কোন একটি মাত্র সূরার মত অনুরূপ আরেকটি সূরা তৈরির চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। কোরআনে বহুবার একই ধরণের চ্যালেঞ্জের পুনরাবৃত্তিও হয়েছে। বর্তমান কাল পর্যন্ত কোরআনের সূরার মত সৌন্দর্য, অলংকার, গভীরতা ও অর্থের দিক থেকে সমমানের আরেকটি সূরা চ্যালেঞ্জ অপূরণকৃত রয়ে গেছে।বর্তমান যুগের কোন লোক পৃথিবী চেপ্টা এ মর্মে সর্বোত্তম কাব্যিক ভঙ্গীতে কোন ধর্মীয় পুস্তকের বক্তব্যকে মেনে নেবে না। কেননা, আমরা যে যুগে বাস করছি, সে যুগে মানবিক কারন, যুক্তি ও বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কোরআনের অতি চমকপ্রদ ও সুন্দর ভাষার জন্য অনেকেই একে ঐশী গ্রন্থ হিসাবে মেনে নিতে চাইবে না। কোন ঐশী গ্রন্থের দাবীদার কে অবশ্যই যুক্তি ও কারণের শক্তির দিক থেকে ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
প্রখ্যাত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনেষ্টাইন বলেছেনঃ বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ। আসুন আমরা কোরআন নিয়ে গবেষনা চালাই যে,তা বজ্ঞানের সাথে সামজ্ঞস্যপূর্ন না অসামজ্ঞস্যপূন্য। কোরআন কোন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয়, বরং নিদর্শন গ্রন্থ। এতে ৬ হাজার নিদর্শন (আয়াত) আছে। এক হাজারেরও বেশী আয়াত বিজ্ঞানের মূল বিষয় বসতু নিয়ে আলোচনা করেছে।
আমরা সকলে জানি যে, বিজ্ঞান অনেক সময় সিদ্বান্ত পরিবর্তন করে। এই পুস্তিকায় আমি কেবল বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্য (Fact) নিয়ে আলোচনা করবো, কল্পনা বা ধারনার উপর নির্ভরশীল তত্ত্ব নয়, যা প্রমানিত হয়নি।
বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে জ্যোতিবিদের প্রদত্ত ব্যাখ্যা ব্যাপকহারে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে নভোচারী ও জ্যোতিবিদদের সংগৃহীত ও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষামূলক উপাত্ত দ্বারাও তা সমর্থিত হয়েছে। মহা বিস্ফোরণ তত্ত অনুযায়ী মহাবিশ্ব ছিল প্রথমে একটি বিশাল নীহারিকা। পরে ২য় পর্যায়ে তাতে এক বিরাট বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে ছায়া পথ তৈরী হয়। এগুলো পরে তারকা, গ্রহ, সূর্য ও চন্দ্র ইত্যাদিতে রুপান্তরিত হয়। বিশ্বের সূচনা বিষ্ময়কর এবং দৈবক্রমে তা ঘটার সম্ভাবনা শূন্য পর্যায়ে।
পবিত্র কোরআন মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে নিম্নোক্ত আয়াতে বলেছে,
“কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মূখ বন্ধ ছিল, তারপর আমি ঊভয়কে খুলে দিলাম।” - সূরা আম্বিয়া-৩০
বিজ্ঞানীরা একমত যে ,মহা বিশ্বে ছায়াপথ তৈরীর আগে আকাশ সম্পর্কিত পদার্থগুলো গ্যাস জাতীয় জিনিস ছিল।সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিপুল সংখ্যক গ্যাসজাতীয় পদার্থ কিংবা মেঘ, ছায়া পথ তৈরীর আগে বিদ্যমান ছিল।আকাশ সম্পর্কিত প্রাথমিক পদার্থকে গ্যাস অপেক্ষা ধুঁয়া বলা বেশী সঙ্গত।কোরআন মজীদ ধুঁয়া দ্বারা মহাবিশ্ব সৃষ্টির ঐ অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে। আল্লাহ বলেনঃ
“তার পর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা কিছু ধূঁম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবী বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা সেচ্ছায় আসলাম। - সূরা হা-মীম সাজদাহ-১১
এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, এ অবস্থায় মহাবিস্ফোরণেরই ফল এবং মহানবী মোহাম্মদ (ছঃ) এর আগে এ বিষয়টি কারো জানা ছিল না।তাহলে প্রশ্ন জাগে, এ জ্ঞানের উৎস কি ?
প্রথম যুগে মানুষ বিশ্বাস করত যে, পৃথিবী চেপ্টা ছিল।বহু শতাব্দী ব্যাপী মানুষ দূরে সফরে যেতে ভয় পেত কি জানি পৃথিবীর কিনারা থেকে পড়ে যায় কিনা।স্যার ফ্রনকিস ড্র্যাক প্রথম প্রমান করেন যে, পৃথিবী গোলাকার । তিনি ১৫৯৭ সনে পৃথিবীর চারপাশে নৌভ্রমন করেন।আমরা দিবা রাত্রির আবর্তনের ব্যাপারে কোরআনের নিন্মোক্ত আয়াতটি বিবেচনা করতে পারি।
“আপনি কি দেখেনা আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান? -সূরা লোকমান - ২৯
অর্থাৎ রাত আস্তে আস্তে এবং ক্রমান্বয়ে দিনে রূপান্তরিত হয়, অনুরূপভাবে দিন ও আস্তে আস্তে এবং ক্রমান্বয়ে রাতে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবী গোলাকৃতির হলেই কেবল এ ঘটনা ঘটতে পারে ।
নিম্নের আয়াত দ্বারাও পৃথিবী যে গোলাকার তা বুঝা যায়্ আল্লাহ বলেনঃ
তিনি আসমান ও জামিন কে সৃষ্টি করেছেন যথার্থভাবে। তিনি রাতকে দিন দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং রাত দ্বারা আচ্ছাদিত করেন।” সূরা যোমর -৫
আয়াতে ব্যবহৃত (আরবী) শব্দের অর্থ হলো কুন্ডলী পাকানো বা কোন জিনিসকে প্যাঁচানো । যেমন করে মাথায় পাগড়ী প্যাঁচানো হয়। রাত ও দিনের আবর্তন তখনই সম্ভব যখন পৃথিবী গোলাকার হয়।
পৃথিবী বলের মত গোলাকার নয়, বরং মেরুকেন্দ্রিক চেপ্টা।
নিম্নের আয়াতে পৃথিবীর আকৃতির বর্ননা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
“তিনি পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।” সূরা নাযিআত -৩০
আরবী শব্দ এর দুটো অর্থ আছে। একটি অর্থ হলো উঠপাখির ডিম।উটপাখীর ডিমের আকৃতির মতই পৃথিবীর আকৃতি মেরুকেন্দ্রিক চেপ্টা । অন্য অর্থ হল ‘সম্প্রসারিত করা’। উভই অর্থই বিশুদ্ধ।
কোরআন এভাবেই পৃথিবীর আকৃতি বিশুদ্ধভাবে বর্ণনা করেছে।অথচ যখন কোরআন যখন নাযিল হয় তখন প্রচলিত ধারনা ছিল পৃথিবী হচ্ছে চেপ্টা।
আগের সভ্যতা গুলোর ধারণা ছিল,চাঁদের নিজস্ব আলো আছে।কিন্তু বিজ্ঞান বর্তমানে আমাদেরকে বলে যে,চাঁদের আলো হচ্ছে প্রতিফলিত আলো।এ সত্যটি কোরআন আমাদেরকে আজ থেকে ১৪শ বছর আগে বলেছে।আল্লাহ বলেনঃ
“কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমণ্ডলকে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।”- সূরা ফুরকান-৬১
আরবীতে সূর্যকে (আরবী ) বলে।কোরআনে (আরবী )শব্দ দ্বারাও সূর্য বুঝানো হয়েছে।এর অর্থ হল,বাতি বা র্মশাল।অন্য জায়গায় ,সূর্যকে (আরবী) উল্লেখ করা হয়েছে।এর অর্থ হল ‘জ্বলন্ত কিরণোজ্জল বাতি বা মশাল।’অন্য আরেক জায়গায়, একই অর্থ বুঝানোর জন্য (আরবী ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।এর অর্থ হল ‘কিরণোজ্জল সূর্য ’।এই তিনটি বর্ণনাই সূর্যের উপযোগী।কেননা,সূর্য নিজ দহনক্রিয়ায় ব্যাপক তাপ ও আলো উৎপাদন করে।
চাঁদের আরবী প্রতিশব্দ হল (আরবী ) কোরআন চাঁদকে (আরবী ) বলেছে।এর অর্থ হল‘ স্নিগ্ধ আলোদানকারী।’অর্থাৎ প্রতিফলিত আলো দেয়।কোরআনের বর্ণনা চাঁদের আসল প্রকৃতির সাথে খাপ খায়।চাঁদ নিজ থেকে আলো দেয় না।বরং তা এমন এক নিষ্ক্রীয় জিনিস যার উপর সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব ঘটে।কোরআনে কখনও চাঁদকে (আরবী )কিংবা (আরবী ) বলা হয়নি এবং সূর্যকেও (আরবী )কিংবা (আরবী ) বলা হয়নি।
এর দ্বারা বুঝা যায় যে,কোরআন সূর্য ও চাঁদের আলোর মধ্যকার পার্থক্যকে স্বীকার করে।
নিম্নের আয়াত,চাঁদ ওসূর্যের আলোর প্রকৃতি উল্লেখ করেছে।আল্লাহ বলেনঃ
“তিনিই সত্তা যিনি সূর্যকে কিরণোজ্জল এবং চাঁদকে স্নিন্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।”সুরা ইউনুস-৫
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেনঃ
“তোমরা কি লক্ষ্য করনা যে,আল্লাহ কিভাবে সাত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন,সেখানে চাঁদকে রেখেছেন স্নিন্ধ আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে ?”- সুরা নূহ-১৫-১৬
মহান কোরআন এবং আধুনিক বিজ্ঞান চাঁদ ও সূর্যের আলোর ব্যবধানের ব্যাপারে অভিন্ন কথা বলে।
দীর্ঘদিন ব্যাপী ইউরোপীয় দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করত যে,পৃথীবি মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং সূর্য সহ অন্যান্য জিনিসগুলো একে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘুরে।এ ভূকেন্দ্রিক ধারণা,পাশ্চাত্যে খৃষ্টপৃর্ব ২য় শতাব্দীতে টলেমীর যুগ থেকে বিদ্যামান ছিল।১৫১২ খৃঃ নিকোলাস কোপারনিকাস গ্রহের গতি আছে মর্মে- সূর্যকেন্দ্রিক তত্ব দেন।এই তত্বে বলা হয়,সৌরজগতের কেন্দবিন্দু- সূর্য গতিহীন।কিন্তু অন্যান্য গ্রহগুলো একে কেন্দ্র করে চারদিকে ঘুরে।
১৬০৯ খৃঃ জার্মান বিজ্ঞানী ইউহান্নাস কেপলার ‘Astronomia Nova’নামক একটি বই প্রকাশ করেন।তিনি তাতে মত প্রকাশ করেন যে, গ্রহগুলো শুধুমাত্র সূর্যের চারদিকে ডিম্বাকৃতির কক্ষপথেই চলে না,বরং সেগুলো নিজ নিজ কক্ষপথে অনিয়মিত গতিতে আবর্তিত হয়।এ জ্ঞানের আলোকে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের পক্ষে সৌরজগতের বহু বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হয়েছে,যার মধ্যে দিন রাতের বিষয়টি অন্যতম।
এসকল আবিষ্কারের পর ধারনা করা হয় যে, সূর্য স্থিতিশীল যা পৃথিবীর মত নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে না।আমি স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় ভুগোলে এ ভুল মতটি পড়েছি বলে মনে পড়ে।
আমরা এখন কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি ব্যাখ্যা করবো।আল্লাহ বলেনঃ
“তিনি সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং চাঁদ-সূর্য। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।” (সূরা আম্বিয়া -৩৩)
এ আয়াতে (আরবী)শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে যা (আরবী) থেকে এসেছে। শাব্দিক অর্থ সাঁতার কাটা। এ শব্দটি কোন জিনিসের গতি বুঝানোর জন্য ব্যবহূত হয়। আপনি যমীনে কোন ব্যাক্তির জন্য এ শব্দটি ব্যবহার করলে এর অর্থ এটা নয় যে, তিনি গড়াগড়ি দিচ্ছেন। বরং এর অর্থ হবে তিনি হাটেন বা দৌড়ান।আর পানিতে অবস্থানকারী কোন ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করলে এর অর্থ তিনি ‘ভাসেন’ হবে না, বরং এর অর্থ হবে, তিনি সাঁতার কাটেন।
অনুরূপভাবে আপনি যদি শব্দটি আকাশ সম্পকির্ত কোন জিনিস,যেমন সূর্য সম্পর্কে ব্যবহার করেন,তখন এর অর্থ শুধু মহাশূন্যে উড়া নয়,বরং এর অর্থ হল,তা মহাশূন্যে আবর্তিত হয়। স্কুলের অধিকাংশ পাঠ্যপুস্তকে এ সত্যটি উল্লেখ আছে যে,সূর্য নিজ কক্ষপথে ঘুরে। সূর্যের নিজ কক্ষে আবর্তনকে বুঝার জন্য টেবিলের উপরে সূর্যের প্রতিকৃতি প্রদর্শন করা দরকার। চোখ বাঁধা না হলে যে কেউ সূর্যের প্রতিকৃতিটি পরীক্ষা করতে পারে। দেখা গেছে,সূর্যের রয়েছে অবস্থান স্থলসমূহ যা প্রতি ২৫দিনে একবার আবর্তন করে থাকে। অর্থাৎ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করতে সূর্যের প্রায় ২৫ দিন সময় লাগে।
সূর্য প্রতি সেকেন্ডে মহাশূনে ২৪০ কিলোমিটার গতিতে চলে। আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে একবার তার আবর্তন করতে ২০০ মিলিয়ন বছর সময় লাগে।
আল্লাহ কোরআন মজীদে বলেনঃ
“সূর্য নাগার পেতে পারে না চাঁদের এবং রাত আগে চলে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।” সূরা ইয়াসিন -৪০
এ আয়াতে এমন সব বৈজ্ঞানিক সত্য রয়েছে, যা মাত্র সম্প্রতি আধুনিক জ্যোতিষ শাস্ত্র আবিষ্কার করেছে। সেগুলো হল,চাঁদ ও সূর্যের স্বতন্ত্র কক্ষপথ আছে এবং সেগুলো নিজস্ব গতিতে মহাশূন্যে ভ্রমন করছে।
সূর্য সৌরজগতকে নিয়ে যে নির্দ্দিষ্ট স্থানের দিকে চলছে,সে স্থানটি আধুনিক জ্যোতিষশাস্ত্র সুনির্দ্দিষ্টভাবে আবিষ্কার করেছে। এর নামকরণ করা হয়েছে সৌর শৃঙ্গ বা (Solar Apex )। সৌরজগত মহাশূন্যে যে দিকে ধাবিত হয়,সে দিকটির অবস্থান বর্তমানে যথার্থ ও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং সেটি হল বৃহদাকারের এক গ্রুপ তারকা। Consellation of Hercules(Alpha Lyrae )
চাঁদ নিজ কক্ষপথে অতটুকু সময়ে একবার আবর্তন করে,পৃথিবীর চারদিক ঘুরতে যতটুকু সময় লাগে। একবার ঘুরে আসতে তার সাড়ে ২৯ দিন সময় লাগে।
কোরআনের আয়াতের বৈজ্ঞানিক যথার্থতা সম্পর্কে যে কেউ আশ্চর্য না হয়ে পারেনা। আমাদের কি এ প্রশ্নের উপর চিন্তা করা উচিত নয় যে,কোরআনের জ্ঞানের উৎস কি?
বিগত ৫ বিলিয়ন বছর ব্যাপী রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সূর্যের দেহে তাপ সৃষ্টি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এক সময়ে এর অবসান ঘটবে এবং তখন সূর্য নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। ফলে পৃথিবীর সকল অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে।সুর্যের অস্থায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ কোরআন মজীদে বলেনঃ
“সূর্য তার নির্দ্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশ্যালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ” (সূরা ইয়াসিন-৩৮) অনূরূপ বর্ণনা সূরা রাদ- এর ২নং আয়াত, সূরা ফাতের এর ১৩নং আয়াত, সূরা যোমারের ৫নং আয়াত ও ২১নং আয়াতে আছে।
এখানে উল্লেখিত (আরবী)শব্দটির অর্থ হল‘নির্দ্দিষ্ট স্থান’ বা ‘সময়’। কোরআন বলেছে,সূর্য একটা নির্ধারিত স্থানের দিকে আবর্তিত হচ্ছে যা একটা নির্দ্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এর অন্য অর্থ হল,একদিন তার অবসান ঘটবে। এ মর্মে আল্লাহ বলেন (আরবী) ‘যখন সূর্য নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। (সূরা তাকবীর-১)সূর্যের নিষ্প্রভ হওয়া কেয়ামতের লক্ষণ।
সুসংগঠিত সৌরজগতের বাইরের স্থানকে প্রথমে শুণ্য মনে করা হত। জ্যোতির্বিদরা পরবর্তীতে মহাশুন্যে বস্তুর সেতু আবিষ্কার করেন। বস্তুর সেতুকে প্লাজমা বলে,যাতে পারমানবিক গ্যাস রয়েছে এবং তাতে সমান সংখ্যক মুক্ত ইলেকট্রন ও ইতিবাচক পরমাণু আছে। কোন কোন সময় প্লাজমাকে বস্তুর ৪র্থ অবস্থা বলে। অন্য তিনটি অবস্থা হল,কঠিন তরল এবং বায়বীয়। কোরআন নিম্নের আয়াতে মহাশুন্যের ঐ বস্তুর অস্তিত্ব সম্পর্কে কথা বলেছে। আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) “তিনি সে সত্তা যিনি আসমান ও যমীন এবং এ দুয়ের মাঝে অবস্থিত সকল সৃষ্টি করেছেন। সূরা ফোরকান-৫৯
১৪০০ বছর আগে মহাশূন্যে সৌর বস্তুর জ্ঞান অস্তিত্বের জ্ঞান সম্পর্কে বললে যে কেউ তা উপহাস করতে পারে।
১৯২৫খৃঃ জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবেল পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণের সাহায্যে বলেছেন,প্রতিটি ছায়াপথ অন্য ছায়াপথ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। এর অপর অর্থ হল,মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এখন বৈজ্ঞানিক সত্য। কোরআন মহাবিশ্বের প্রকৃতি সম্পর্কে একই কথা বলেছে।আল্লাহ বলেনঃ
“আমি নিজ ক্ষমতা বলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই এর সম্প্রসারণকারী।”সূরা যারিয়াত-৪৭
আরবী শব্দ (আরবী) এর বিশুদ্ধ অনুবাদ হল,‘সম্প্রসারণকারী।’ এটা মহাবিশ্বের ব্যাপক সম্প্রসারণশীলতার প্রতি ইঙ্গিতবাহী।
প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ স্টিফেন হকিং তার A Brief History of time বইতে লিখেছেন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সম্পর্কিত আবিষ্কার বিংশ শতাব্দীর মহান বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব। মানুষ কর্তৃক টেলিষ্কোপ আবিষ্কারের পূর্বে কোরআন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছে।
কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, আরবরা যেহেতু জ্যোতির্বিদ্যায় অগ্রসর ছিল, সেহেতু কোরআনে জ্যোতিবিজ্ঞান সম্পর্কিত সত্যের উল্লেখ আশ্চর্যের বিষয় নয়। জ্যোতির্বিদ্যায় আরবদের অগ্রসরতার প্রতি তাদের স্বীকৃতি সত্য বটে। কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যায় আরবদের অগ্রসরতার কয়েক শতাব্দী পূর্বে কোরআন নাযিল হয়েছিল। অধিকন্তু আরবরা তাদের বৈজ্ঞানিক শৌর্যবীর্যের সময়ে ও উল্লিখিত বিগ ব্যাং -এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছু জানত না। জ্যোতির্বিদ্যার অগ্রগতির কারণে কোরআনে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক সত্যগুলোতে আরবদের কোন অবদান ছিল না। বরং বিপরীতটাই সত্য। আর তা হল,তারা জ্যোতির্বিদ্যায় এজন্য অগ্রগতি অর্জন করেছে যে, কোরআনে জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে আলোচনা স্থান পেয়েছে।
অণূকে বিভক্ত করা যায়ঃ প্রাচীন যুগে ‘অণুতত্ব’ নামে একটি তত্ব ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে।২৩০০ বছর আগে, গ্রীকদেশীয় এ তত্বটি যিনি দেন,তার নাম,Democritus।ডেমোক্রিটাস ও তার পরবর্তী যুগের লোকেরা মনে করত যে,বস্তুর সর্বাধিক ক্ষুদ্র একক হচ্ছে,অণু।প্রাচীন আরবরাও তা বিশ্বাস করত।আরবী শব্দ (আরবী) এর সাধারণ অর্থ হচ্ছে,অণু।সম্প্রতি,আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে, বিভক্ত করা যায়।অণুকে বিভক্ত করার বিষয়টি বিংশ শতাব্দীর আবিষ্কার।আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে এ শব্দটি আরবদের কাছেও ছিল অসাধারণ।কেননা,কেউ (আরবী )শব্দের সীমাবদ্ধ অর্থের গতি অতিক্রম করতে পারেনি।কোরআনের নিম্নের আয়াতটি (আরবী ) শব্দের এই সীমা স্বীকার করেনা।আল্লাহ বলেনঃ
“কাফেররা বলে,আমাদের উপর কেয়ামত আসবে না।বলুন,কেন আসবেনা? আমার প্রতিপালকের শপথ,অবশ্যই আসবে।তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত।আসমান ও যমীনে অণু পরিমাণ কিংবা তা থেকে ক্ষুদ্র ও বড় কোন কিছুই তার অগোচরে নয়।সমস্তই আছে সুষ্পষ্ট কিতাবে।”( সূরা সাবা-৩) অনুরূপ বর্ণনা সূরা ইউসুফের ৬১নং আয়াতেও আছে।
এ আয়াত আল্লাহর সর্বজ্ঞান এবং প্রকাশ্য ও গোপন সকল কিছু সম্পর্কে অবগতির কথা উল্লেখ আছে।আয়াত আরো বলা হয়েছে,আল্লহ অণু অপেক্ষা ছোট বড় সকল কিছু সম্পর্কে জ্ঞাত।আয়াত পরিষ্কার বলেছে যে, কোন জিনিস অণু অপেক্ষাও ক্ষুদ্র আছে।অণু অপেক্ষা ক্ষুদ্র জিনিসের অস্তিত্ব আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার।
১৫৮০ খৃঃ বর্ণার্ড পলিসি সর্বপ্রথম বর্তমান যুগের পানি চক্র সম্পর্কে আলোচনা করেন।তিনি সাগর থেকে বাষ্পাকারে পানির উড়ে যাওয়া এবং পরে ঠান্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হওয়ার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন।মেঘমালা সাগর থেকে দূরবর্তী ভূখন্ডের উপর ঘনীভূত হয়ে পরে বৃষ্টি আকারে নীচে পতিত হয়।বৃষ্টির পানি খাল-বিল ও নদী-নালায় জড় হয়ে অব্যাহত নিয়মে সাগরে প্রবাহিত হয়।খৃষ্টপূর্ব ৭ শতাব্দী আগে,মিলেটাসের থেলসের মতে সাগরের উপরিভাগের ছিঁটানো পানি কণাকে ধারণকারী বাতাস, ভূখন্ডে তা বৃষ্টি আকারে ছড়িয়ে দেয়।
আগের যুগের লোকেরা ভূগর্ভস্থ পানির উৎস সম্পর্কে জানতনা।তারা ভাবত যে,সাগরের পানি দমকা বাতাসের মাধ্যমে সজোরে ভূখন্ডে এসে পতিত হয়।তারা আরও বিশ্বাস করত যে,গোপন পথে কিংবা গভীর জলরাশি থেকে পানি পুনরায় ফিরে আসে যা সাগরের সাথে জড়িত।প্লেটোর যুগ থেকে এটাকে ‘তারতারুস’ বলা হত।এমন কি ১৮শ শতাব্দীর বিখ্যাত চিন্তাবিদ ডেস কার্টেজও এমত পোষণ করতেন।১৯শতকে এরিষ্টেটলের তত্ব সর্বত্র বিদ্যমান ছিল।ঐ তত্বে বলা হয় যে, পাহাড়ের ঠান্ডা গভীর গুহায় পানি ঘনীভূত হয় এবং মাটির নীচ দিয়ে প্রবাহিত হ্রদ ঝর্ণাগুলোকে পানি সরবরাহ করে।বর্তমান যুগে আমরা জানতে পেরেছি যে, বৃষ্টির পানি মাটির ফাটল দিয়ে ভেতরে চুইয়ে পড়ার কারণে ঐ পানি পাওয়া যায়।
একথাই কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে এভাবে বলা হয়েছেঃ
“তুমি কি দেখনি যে,আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন,এর দ্বারা বিভিন্ন রংয়ের ফসল উৎপন্ন করেন?- সূরা যোমার -২১
তিনি আরো বলেনঃ
“তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং মৃত্যুর পর ভূমির পূনরুজ্জীবন করেন।নিশ্চয়ই এতে, বুদ্ধিমান লোকদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলী।” (সূরা আর রুম -২৪ )
আল্লাহ বলেনঃ
“আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মত, তারপর তাকে যমীনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করতে সক্ষম। -সূরা আল মুমিনূন -১৮
১৪০০ বছর আগের অন্য কোর বই পানি চক্রের এরূপ নিখুঁত বর্ণনা দেয়নি।
পানি বাষ্প হয়ে আকাশে উঠে।কোরআন এ সত্য তুলে ধরে বলেছে (আরবী) “শপথ চক্রশীল আকাশের ।” (সূরা আত - তারেক -১১ ) পানি চক্রও এর মধ্যে শামিল।
আল্লাহ বলেনঃ
“আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি,তারপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি ,এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই।”সূরা হিজর ২২
এখানে উল্লেখিত (আরবী ) শব্দটি (আরবী )এর বহুবচন ।এর অর্থ হল গর্ভবতীকারী।এখানে এর ব্যাখ্যা হচ্ছে,বাতাস মেঘমালাকে একসাথে ধাক্কা দিয়ে ঘনীভূত করে।যার ফলে আকাশে বিদ্যুৎ চমকায় এবং পরে বৃষ্টি বর্ষিত হয়।
কোরআনের নিম্নের আয়াতেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়ঃ
“তুমি কি দেখনা যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চারিত করেন,তারপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন,অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন,তারপর তুমি দেখ যে, তার মধ্য থেকে বারিধারা নির্গত হয়। তিনি আকাশস্থিত শিলাস্তুপ থেকে শিলা বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা,তা অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন।তার বিদ্যুত ঝলক দৃষ্টি শক্তিকে যেন বিলীন করে দিতে চায়।” সূরা আননূর -৪৩
আল্লাহ আরো বলেনঃ
“তিনি আল্লাহ ,যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করে।অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে স্তরে স্তরে রাখেন।এরপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারা।তিনি বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা পৌঁছান,তখন তারা আনন্দিত হয়।”- সূরা আর রুম-৪৮
পানি বিজ্ঞানের আধুনিক উপায় এই বিষয়ে কোরআনের বর্ণনার সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ্য।কোরআন মজীদের নিম্নোক্ত সূরা সমূহেও পানি চক্র সম্পর্কে উল্লেখ আছে।
সূরা আরাফ -৫৭; সূরা রাদ -১৭; সূরা ফোরকান -৪৮-৪৯; সূরা ফাতির -৯; সূরা ইয়াসিন -৩; সূরা জাসিয়া-৫; সূরা আল ক্কাক -৯-১১; সূরা ওয়াকেয়া- ৬৮-৭০; এবং সূরা আল মূলক -৩০।
ভূতত্ব বিদ্যায় ভাজ করার বিষয়টি সম্প্রতি আবিষ্কৃত সত্য এবং পাহাড় - পর্বত সৃষ্টির পেছনে ভাঁজ করার বিষয়টি কার্যকর।আমরা যে ভূপৃষ্ঠে বাস করি তা শক্ত ছালের মত।পক্ষান্তরে এর গভীর স্তরগুলো গরম ও তরল যা কোন প্রাণী বাস করার উপযোগী নয়।এটা জানা কথা যে, পাহাড় - পর্বতের স্থিতিশীলতার সম্পর্ক ভাঁজ করার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত।কেননা ভাঁজ করার ফলেই পাহাড় - পর্বতের ভিত্তি তৈরি হয়েছে।
ভূতত্ববিদরা বলেন যে, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ হল,৬,০৩৫ কিলোমিটার।আর আমরা যে ভূপৃষ্ঠে বাস করি তা বেশী পাতলা যার পারিসর ২-৩৫ কিলোমিটার।যেহেতু,ভূপৃষ্ঠ পাতলা,তাই তার নড়ার সম্ভাবনা বেশী।পাহাড় গুলো খুটি কিংবা তাঁবুর পেরেকের মত কাজ করে যা ভূপৃষ্ঠকে স্থিতিশীল রাখে।কোরআন হুবহু এরূপ কথাই বলেছে।আল্লাহ বলেনঃ
“আমরা কি যমীনকে বিছানা এবং পাহাড়কে পেরেক লোহা বানাইনি?” -সূরা আন নাবা- ৬-৭ (আরবী) এগুলো হল,ভৌগলিক ভাঁজের ভিত্তি।‘Earth’নামক একটি বই বিশ্বের বহু বিশ্বদ্যালয়ে ভূ-তত্ব বিদ্যার রেফারেন্স বই হিসেবে গণ্য হয়।ঐ বইয়ের একজন প্রখ্যাত লেখক হলেন ডঃ ফ্রাস্ক প্রেস।তিনি ১২ বছর ব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান একাডেমীর প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিম্মি কার্টরের বিজ্ঞান উপদেষ্টা ছিলেন।ঐ বইতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে,পাহাড় হচ্ছে গোঁজ বা পেরেকের আকৃতি বিশিষ্ট এবং তা সকল কিছুর একটা ক্ষুদ্র অংশ মাত্র যার মূল মাটির গভীরে প্রোথিত।ডঃ প্রেসের মতে, পাহাড় ভূপৃষ্টের স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কোরআন মজীদ পাহাড়ের কার্যক্রম পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করে বলেছে, তা পৃথিবীকে কম্পন ও নড়া থেকে রক্ষা করে।আল্লাহ বলেনঃ
“আমি পৃথিবীতে ভারী বোঝা রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে ।”সূরা আল আম্বিয়া -৩১ অনুরূপ বর্ণনা সূরা লোকমানের ১০নং আয়াত এবং সূরা নাহলের ১৫নং আয়াতেও আছে।
কোরআনের বর্ণনা আধূনিক বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণ।
ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ বহু শক্ত প্লেটে বিভক্ত এবং এর ঘনত্ব হচ্ছে ১০০কিলোমিটার। প্লেটগুলো আংশিক গলিত অঞ্চলে ভাসমান,যাকে Aesthenosphere বলে।
প্লেটের সীমানে- পাহাড়গুলো অবস্থিত।ভূপৃষ্ঠের ত্বক সাগরের ৫ কিলোমিটার নীচ পর্যন্ত ঘন।প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ঘন নীচু প্লেট হচ্ছে মহাদেশের উপরিভাগ এবং প্রায় ৮০ কিলোমিটার ঘন নীচুতে বিশাল পাহাড়ের পরিসর।এগুলো পাহাড়ের শক্তিশালী ভিত্তি।কোরআন নিম্নের আয়াতে পাহাড়ের ঐ শক্ত ভিত্তি কথা উল্লেখ করেছে।
‘তিনি পাহাড়কে মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।সূরা নাযিয়াত -৩২
কোরআনের সূরা গাশিয়ার ১৯নং আয়াতেও অনুরূপ বক্তব্য এসেছে।
পাহাড়ের গঠন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বর্ণনা ভূতত্ব বিদ্যার সাথে পুরো মিলে যায়।
এমর্মে আল্লাহ কোরআন মজীদে বলেনঃ
“তিনি পাশাপাশি দু’সাগর প্রবাহিত করেছেন উভয়ের মাঝে রয়েছে অন্তরাল, যা তারা অতিক্রম করেনা।”সূরা আর রাহমান -১৯-২০ আরবী ভাষার (আরবী )মানে ,আড়াল বা অন্তরায়।অবশ্য এটা কোন দৈহিক অন্তরায় নয়।(আরবী )শব্দের অর্থ হল,তারা উভয়ে (দু’সাগর )এক সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়।’প্রাথমিক যুগের তাফসীরকারকরা পানির দু’টো ধারার দু’টো বিপরীতমুখী অর্থের ব্যাখ্যা করতে অপারগ ছিলেন।অর্থাৎ কিভাবে তারা মিশে একাকার হয়ে যায়,অথচ উভয়ের মধ্যে রয়েছে আড়াল।আধুনিক বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে,যেখানে দু’সাগর এসে মিলিত হয় সেখানে উভয়ের মাঝে একটি আড়াল বা অন্তরায় থাকে।ঐ অন্তরায় দু’সাগরকে বিভক্ত করে রাখে।ফলে দেখা যায়,প্রত্যেক সাগরের রয়েছে নিজস্ব তাপমাত্রা,লবণাক্ততা এবং ঘনত্ব।(1.principles of oceanography, Davis,pp 92-93)সাগর বিশারদদের পক্ষে এ আয়াতের ব্যাখ্যা দানের উত্তম সুযোগ রয়েছে।সাগরের মাঝে প্রবাহমান ঢালু পানির অদৃশ্য আড়াল আছে যার দিয়ে এক সাগরের পানি অন্য সাগরে যায়।
কিন্তু যখন এক সাগরের পানি অন্য সাগরে প্রবেশ করে তখন সে পানি তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে এবং অন্য সাগরের পানির বৈশিষ্ট্যের সাথে একাকার হয়ে যায়।দু’পানির ধারার মধ্যে ঐ অন্তরায় একটি অন্তবর্তীকালীন একাকারকারী জোন হিসেবে কাজ করে।
কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতেও এই বিষয়ের উল্লেখ এসেছে।আল্লাহ বলেনঃ (আরবী )“তিনি সে সত্তা যিনি দু’সাগরের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করেছেন।” সূরা নমল -৬১
এ অবস্থা বা অন্তরাল বিভিন্ন সাগরে দেখা যায়।জিব্রাল্টারে ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের মিলন স্থলে,কেপ পয়েন্ট,কেপ পেলিনসুলা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার যেখানে আটলান্টিক মহাসাগর ভারত মহাসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে সেখানে।
কিন্তু কোরআন যেখানে মিষ্টি পানি ও লবণাক্ত পানির কথা বলে,তখন তা ঐ অন্তরালের সাথে নিষেধকারী প্রতিন্ধকতার কথা উল্লেখ করে।আল্লাহ বলেন,
“তিনি সমান্তরালে দু’সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, এটি মিষ্ট,তৃষ্ণা নিবারক ও এটি লোনা,বিস্বাদ ;উভয়ের মাঝেখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়,একটি দুভের্দ্য আড়াল।” সূরা ফোরকান- ৫৩
আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার অনুযায়ী দেখা যায়,মিষ্টি পানি যেখানে লবণাক্ত পানির সাথে গিয়ে মিশে, সে স্থানের অবস্থা ঐ স্থান থেকে ভিন্ন যেখানে দু’লবণাক্ত পানি গিয়ে মিশে।নদীর মোহনার লবণাক্ত পানি ও মিষ্টি পানি মিলিত হলে যে পার্থক্য সূচিত হয়,তার কারণ হল, সেখানে দুটো স্তরকে পৃথককারী চিহ্নিত ঘনত্বের ধারাবাহিতাবিহীন pycnocline zone রয়েছে।(oceanography, Gross, p.242,introductory ocanograpry, Thurman pp300,301) আর এই আড়াল সৃষ্টিকারী জোনে মিষ্টি পানি ও লবণাক্ত পানির লবণাক্ততার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।(do)
এদৃশ্য মিসরের নীল নদ ভূমধ্যসাগরের যে মিলিত হয়েছে,সেখানে সহ আরো বহু জায়গায় দেখা যায়।কোরআনে উল্লেখিত এই বৈজ্ঞানিক বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্বেবিদ্যালয়ের প্রখ্যাত সমুদ্র বিজ্ঞানী ও ভূতত্ব বিদ্যার অধ্যাপক ডঃ উইলিয়াম হের বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে।
অধ্যপক দুর্গা রাও একজন প্রখ্যাত সামুদ্রিক ভূতত্ববিদ এবং জেদ্দার বাদশাহ আবদুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ছিলেন।তাঁকে কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের উপর মন্তব্য করতে বলা হয়ঃ
“অথবা (তাদের কর্ম) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ,যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে।একের উপর এক অন্ধকার।যখন সে তার হাত বের করে,তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না।আল্লাহ যাকে জ্যোতি দেন না,তার কোন জ্যোতি নেই।সূরা আন নূর-৪০
অধ্যপক রায় বলেন, বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি মাত্র আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে মহাসাগরের গভীরের অন্ধকার সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছে।মানুষ বিনা সাহায্যে পানির ২০-৩০ মিটার নীচে ডুব দিতে পারেনা এবং সাগরের ২০০ মিটারের অধিক নীচের অঞ্চলে বাঁচাতেও পারেনা। এ আয়াতে সকল সাগরের কথা বলা হয়নি। কেননা, সকল সাগরের নীচে অন্ধকারের স্তর নেই। আয়াতে কেবল গভীর সাগর বা মহাসাগরের কথাই বলা হয়েছে কেননা আল্লাই উক্ত আয়াতে বলেছেন, ‘গভীর সাগরের অন্ধকার’। দু‘টো কারণে গভীর মহাসাগরের স্তরবিশিষ্ট অন্ধকার দেখতে পাওয়া যায়।
১। আলোক রশ্মির সাতটি রং রংধনুতে দেখতে পাওয়া যায়। সে রং গুলো হলো, বেগুনী, নীল , নীলাভ সবুজ হলুদ, কমলা এবং লাল।আলোক রশ্মি পানিতে পড়লে তা ভেঙ্গে যায়। পানির উপরিভাগের ১০-১৫ দশ মিটার পর্যন্ত লাল রং ধারণ করতে পারে। কোন ডুবুরী পানির ২৫ মিটার নীচে ডুব দিয়ে আহত হলে, নিজের রক্তের লাল রং দেখতে পাবেনা।কেননা লাল রং ঐ গভীরতা পর্যন্ত পৌ ছায় না। অনুরূপভাবে কমলা রং পানির ৩০-৫০ মিটার নীচ পর্যন্ত পৌঁছে, হলুদ রং ৫০-১০০ মিটার, সবুজ রং ১০০-২০০ মিটার, নীল রং ২০০ মিটার এবং বেগুনী ও নীলোভ রং ২০০ মিটার গভীর পর্যন্ত পৌঁছে। যেহেতু বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন রং দেখা যায় না , ফলে মহাসাগর অন্ধকার হয়। অর্থাৎ আলোর স্তরসমূহে অন্ধকার স্থান দখল করে । পানির ১০০০ মিটার নীচে সম্পূর্ণ অন্ধকার।
২।মেঘ সূর্যরশ্মিকে ধারন করে বিক্ষিপ্ত করে দেয়। ফরে মেঘের নীচে অন্ধকারের ১টি স্তর সৃষ্টি হয়।এটাই হল,অন্ধকারের ১ম স্তর।সূর্যের আলো মহাসাগরের উপরে পড়লে তা ঢেউয়ের মধ্যে প্রতিফলিত হয়।তখন একে আলোকোজ্জল মনে হয়।ঢেউ আলোর প্রতিফলন ঘটায় এবং অন্ধকার সৃষ্টি করে।অপ্রতিফলিত আলোক রশ্মি মহাসাগরের গভীরে প্রবেশ করে।ফলে মহাসাগরের মধ্যে দুটো ভাগ দেখতে পাওয়া যায়।উপরের ভাগে আলো ও উষ্ণতা এবং গভীরে রয়েছে অন্ধকার।উপরের অংশটি ঢেউয়ের কারণে গভীর সমুদ্র থেকে ভিন্ন ধরনের।
আভ্যন্তরীন ঢেউয়ের মধ্যে সাগর ও মহাসাগরের গভীর পানিও শামিল আছে।কারণ,তখন উপরের পানি অপেক্ষা নীচের পানির ঘনত্ব বেশী থাকে।
আভ্যন্তরীন ঢেউয়ের নীচে অন্ধকার শুরু হয়।এমন মহাসাগরের গভীরে অবস্থানকারী মাছগুলো তখন দেখতে পায়না।তাদের আলোর একমাত্র উৎস হল,নিজেদের শরীরের আলো।
কোরআন এর যর্থাথ বর্ণনা পেশ করে বলেছেঃ“প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়,যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ।
অন্য কথার,এ সকল ঢেউয়ের উপর আরো বিভিন্ন প্রকারের ঢেউ আছে যা মহাসাগরের উপরিভাগে দেখতে পাওয়া যায়।কোরআনের আয়াতে বলা হয়েছেঃ‘যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে।একের উপর এক ঘন অন্ধকার।
উল্লেখিত মেঘমালা একটার উপর আরেকটা আড়াল হিসেবে কাজ করায় এবং বিভিন্ন স্তরে রং ধারণ করায় অন্ধকারের মাত্রা বা ঘনত্ব আরো বেড়ে যায়।
অধ্যাপক দুর্গা রাও এ বলে সমাপ্তি টানেন যে,১৪০০ বছর আগে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এ অবস্থার এত বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।সুতরাং এ সকল তথ্য যে ঐশী উৎস থেকে এসেছে,তা পরিস্কার।আল্লাহ বলেনঃ
“তিনি পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে,অতঃপর তাকে রক্তগত বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন।তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।” সূরা আল ফুরকান-৫৪
আজ থেকে ১৪শ বছর আগে কারো পক্ষে কি একথা চিন্তা করা সম্ভব ছিল যে,সকল প্রাণীকে পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ?বিশেষ করে আরব মরুতে যেখানে সর্বদাই পানি স্বল্পতা রয়েছে,সেখানকার কোন ব্যক্তির পক্ষে কি এ জাতীয় ধারাণ করা সম্ভব ?
মানুষ আগে জানত যে,গাছের মধ্যেও পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ আছে।কিন্তু উদ্ভিদ বিজ্ঞানের মতে প্রত্যেক গাছের মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ আছে।এমনকি সমলিঙ্গ বিশিষ্ট গাছেরও পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ আছে।আল্লাহ বলেনঃ
‘তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন উদ্ভিদ জোড়ায় জোড়ায় উৎপন্ন করেছি।’সূরা তোহা-৫৩
আল্লাহ বলেনঃ
“এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে তিনি দু’প্রকার বা জোড়া সৃষ্টি করেছেন।”সূরা রাদ-৩
ফল হল,উন্নত জাতের গাছের উৎপাদন।ফল উৎপন্ন হওয়ার আগের স্তর হল,ফুল।ফলের রয়েছে পুরুষ ও স্ত্রী জাতীয় অঙ্গ।(পুংকেশর ও ডিম্বক)। পুষ্পরেণু ফুলের মধ্যে এসে পড়লে ফল ধরে, পরিপক্ক হয় এবং বীজ ধারণ করে।দেখা যায়,প্রত্যেক ফলেই পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গের অস্তিত্ব রয়েছে।
আর একথা কোরআনে উল্লেখ আছে।বিশেষ কিছু প্রজাতি রয়েছে যে গুলোর ফল অনিষিক্ত ফুল থেকে আসে।সেগুলোকে পার্থেনোকর্পিক ফল বলা হয়।
যেমনঃকলা,বিশেষ ধরনের আনারস,ডুমুর,কমলা,আঙ্গুর ইত্যাদি।এগুলোরও রয়েছে সুনির্দ্দিষ্ট লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য।
আল্লাহ বলেনঃ
‘আমরা প্রত্যেক জিনিসকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। সূরা আয যারিয়াত-৪৯
এই আয়াত সকল কিছুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টির কথা বলেছে। মানুষ ছাড়াও প্রাণী,গাছ-পালা,ফল-ফলাদিতেও এই জোড়া লক্ষ্যনীয়। বিদ্যুতের মধ্যেও পজিটিভ ও নেগেটিভ অণু আছে যার মধ্যে ইলেকট্রন ও প্রোটন রয়েছে। আরো অনেক কিছুতেও অনুরুপ রয়েছে।
আল্লাহ কোরআনে বলেনঃ
“পবিত্র তিনি,যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে,মানুষকে এবং যা তারা জানেনা তার প্রত্যেককে জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন।”সূরা ইয়াসিন-৩৬
এখানে কোরআন বলে যে,প্রত্যেক সৃষ্টিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে।এমনটি মানুষ যা এখনো জানেনা এবং যা ভবিষ্যতে আবিষ্কৃত হবে,সেগুলোও জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
“আর যত প্রকার প্রাণী পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে এবং যতপ্রকার পাখী দু’ডানাযোগে উড়ে বেড়ায়,তারা সবাই তোমাদের মতই একেকটি সম্প্রদায় বা দল।”সূরা আল আনআম-৩৮
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণী ও পাখী দলীয়ভাবে বাস করে।অর্থাৎ তারা সংগঠিত এবং এক সাথে কাজ করে ও বাস করে।
আল্লাহ বলেনঃ
“তারা কি উড়ন্ত পাখীকে দেখেনা? এগুলো আকাশের অন্তরীক্ষে আজ্ঞাধীন রয়েছে।আল্লাহ ছাড়া কেউ এগুলোকে আগলে রাখেনা।নিশ্চয়ই এতে বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।”সূরা নহল-৭৯
অন্য সূরায়ও পাখী সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে।আল্লাহ বলেনঃ
“তারা কি লক্ষ্য করেনা,তাদের মাথার উপর উড়ন্ত পাখীকূলের প্রতি পাখা বিস্তারকারী ও পাখা সংকোচনকারী ?মেহেরবান আল্লাহই তাদেরকে স্থির রাখেন।তিনি সর্ব বিষয় দেখেন।”সূরা মূলক-১৯-২০
আরবীতে (আরবী )শব্দটি,‘কারো হাত উপরে রাখা,‘আটক করা,ধরা,‘কারো পিঠ ধরা,ইত্যাদি অর্থে ব্যবহূত হয়।আর আয়াতের অর্থ হল ‘আল্লাহ নিজ শক্তির বলে পাখীগুলোকে ধরে রাখেন।এ আয়াতগুলো,ঐশী নিয়ম মোতাবেক পাখীর আচরণের চূড়ান্ত নির্ভরতার উপর জোর দেয়।আধুনিক বৈজ্ঞানিক উপাত্ত দ্বারা কিছু বিশেষ প্রজাতির পাখীর চলাচল কর্মসূচীর পূর্ণতার মাত্রা জানা যায়।পাখীগুলোর রয়েছে দূরবর্তী স্থানে গমন কর্মসূচীর জন্মগত বৈশিষ্ট্য।এর ফলে দেখা যায়,পথ প্রদর্শক ও অভিজ্ঞতাবিহীন কম বয়সের পাখীগুলো পর্যন্ত দীর্ঘ ও জটিল ভ্রমণ কর্মসূচী পূর্ণ করতে পারে এবং তারা একটা নির্দ্দিষ্ট তারিখে প্রস্থান স্থানে পুনরায় ফিরেও আসতে পারে।
অধ্যাপক হামবার্গার তার ‘power and fragility’বইতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বসবাসকারী মেষ পাখীর উদাহরণ দিয়ে বলেছেন,এগুলো ইংরেজী সংখ্যা ‘৪’ (আট)-এর আকৃতিতে ২৪ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব ভ্রমণ করে এবং ৬ মাসের মধ্যে ঐ ভ্রমণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে।বড় জোর এক সপ্তাহ দেরীতে প্রস্থান স্থলে পুনরায় ফিরে আসে।পাখীর স্নায়ু কোষের মধ্যে এ জাতীয় জটিল ভ্রমণের জন্য নির্দেশিকা থাকতে পারে।সে গুলো অবশ্যই কম্পিউটারের মত প্রোগ্রাম করা।আমাদের কি কতর্ব্য নয় যে,আমরা কমপক্ষে ঐ প্রোগ্রাম প্রস্তুতকারীর পরিচয় জানার চেষ্টা করি?
“আপনার প্রতিপালক মৌমাছিকে আদেশ দিলেনঃপাহাড় - পর্বতের গায়ে,গাছে এবং উঁচু চালে ঘর তৈরি কর।এরপর সকল প্রকার ফল থেকে খাও এবং আপন পালনকর্তার উন্মুক্ত পথ সমূহে চল।”সূরা আন নহল-৬৮-৬৯
১৯৭৩ সালে, ‘Von Frisch’মৌমাছির আচরণ ও যোগযোগের উপর গবেষণার জন্য নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।‘মৌমাছি কোন নতুন ফুলের বাগানের সন্ধান পেলে মৌচাকে ফিরে আসে এবং মৌমাছির নাচ’নামক আচরণ দ্বারা অন্যান্য সাথীদেরকে সে বাগানের হুবুহু দিক ও মানচিত্র বলে দেয়।অন্যান্য শ্রমিক মৌমাছিকে তথ্য দেয়ার লক্ষ্যে এ আচরণের বিষয়টি ক্যামেরার সাহায্যে ছবি গ্রহণ সহ অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিকভাবে আবিষ্কৃত সত্য। উপরোক্ত আয়াতে, পবিত্র কোরআন মৌমাছি কিভাবে নিজ দক্ষতার মাধ্যমে নিজ প্রভূর প্রশস্ত পথের সন্ধান পায় তা তুলে ধরা হয়েছে।
অধিকন্তু,উপরোক্ত আয়াতে উল্লেখিত ক্রিয়াপদে স্ত্রীলিঙ্গ ব্যবহূত হয়েছে।(অর্থাৎ (আরবী)এবং (আরবী) চল ও খাও) এর দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, খাদ্যের অন্বেষণে বাসা ত্যাগকারী মৌমাছি হল স্ত্রী মৌমাছি। অন্যকথায়, সৈনিক বা কর্মী মৌমাছি হল স্ত্রী জাতীয়।
মূলতঃ শেক্সপিয়ারের ‘Henry the fourth’নাটকের কিছু চরিত্রে মৌমাছি সম্পর্কে আলোচনা এসেছে।সেখানে মৌমাছিকে সৈনিক উল্লেখ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে তাদের একজন রাজা আছে।শেক্সপিয়ারের যুগে মানুষে এরকমই চিন্তা করত।তাদের ধারণা যে,শ্রমিক মৌমাছিরা পুরুষ।তারা ঘরে ফিরে রাজা মৌমাছির কাছে জবাবদিহী করে।যাই হোক এটা সত্য নয়।শ্রমিক মৌমাছিরা স্ত্রী জাতীয় এবং তারা রাজার কাছে নয়,বরং বাণীর কাছে জবাবদিহী করে।আজ থেকে ৩শ বছর আগে আধুনিক গবেষণায় তা আবিষ্কৃত হয়েছে।অথচ,কোরআন তা ১৪শ বছর আগে বলেছে।
“যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে,তাদের উদাহরণ মাকড়সা।সে ঘর বানায়।আর সব ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরইতো অধিক দুর্বল,যদি তারা জানত।”সূরা আনকাবুত-৪১
কোরআন মাকড়সার দুর্বল অথচ,সুন্দর ও জটিল জালের দৈহিক বর্ণনা দেয়ার পাশাপাশি মাকড়সার ঘরের মধ্যকার দুর্বল সম্পর্কের প্রতিও ইঙ্গিত দিয়েছে।অনেক সময় স্ত্রী মাকড়সা নিজ ঘরে তার পুরুষ সাথীকে হত্যা করে।
এই ক্ষুদ্র উপদেশপূর্ণ দৃষ্টান্তটি সে সব লোকের দুর্বল সম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত দেয়,যারা দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সাহায্য বা আশ্রয় কামনা করে।
“সোলায়মানের সামনে তার সেনাবাহিনীকে জড় করা হল।জ্বিন,মানুষ ও পাখীকূলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যুহে বিভক্ত করা হল।যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌছল,তখন এক পিপীলিকা বলল,হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের ঘরে প্রবেশ কর।অন্যথায়,সোলায়মান ও তাঁর বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে।”সূরা আন নামল-১৭-১৮
অতীতে কেউ হয়তো কোরআনের প্রতি এই বলে উপহাস করে থাকতে পারে যে,কোরআন যাদুকরী কাহিনীর বই,যাতে পিঁপড়ার পরস্পরের কথা এবং উন্নত বার্তা বিনিময়ের বিষয় উল্লেখ আছে।সম্প্রতি,গবেষণার পিঁপড়ার জীবনধারা সম্পর্কে এমন সব বাস্তব সত্য উদঘাটিত হয়েছে,যা আগে মানুষ জানত না।গবেষণায় বলা হয়েছে,মানুষের জীবন সাথে যে সকল প্রাণী ও কীট-পতঙ্গের অধিকতর সাদৃশ্য আছে,সেটা হল,পিঁপড়া।পিঁপড়া সম্পর্কে নিম্নের তথ্যগুলোর আলোকে উপরোক্ত সত্যতা যাঁচাই করা যায়ঃ
১।পিঁপড়া মানুষের মত মৃতদেহ দাফন করে।
২।তাদের মধ্যে উন্নতমানের শ্রম বিভক্তি আছে।তাদের মধ্যে রয়েছে,পরিচালক ‘তত্বাবধায়ক ও শ্রমিক’ ইত্যাদি।
৩।তারা গল্পের জন্য কোন কোন সময় এক সাথে বসে।
৪।নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তাদের রয়েছে অগ্রিম যোগাযোগ পদ্ধতি।
৫।দ্রব্য বিনিময়ের জন্য তাদের বাজার বসে।
৬।তারা শীতকাল দীর্ঘ সময়ের জন্য খাদ্য দ্রব্য গুদামজাত করে।খাদ্য শস্যের মুকুল বের হলে,এবং মুকুলিত অবস্থায় রেখে দিলে যদি শষ্যটি পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে,তখনই তারা মুকুলটির গোড়া কেটে দেয়।তাদের গুদামজাতকৃত শস্যদানা যদি বৃষ্টির কারণে ভিজে যায়,তখন তারা এটাকে রোদে নিয়ে শুকায় এবং শুকানোর পর পুনরায় ভেতরে নিয়ে আসে।মনে হয় তারা এটা জানে যে,আর্দ্যতার কারণে শষ্যদানায় মুকুল বের হতে পারে।ফলে শষ্য দানাটি পঁচে যেতে পারে।
মৌমাছি বিভিন্ন ফুল ও ফল থেকে রস আহরণ করে তা নিজ শরীরের পরিপাক প্রণালী আওতায় মোম কোষ জমা করে।মাত্র কয়েক শতাব্দী আগে মানুষ জানতে পেরেছে যে,মধু মৌমাছির পেট থেকে তৈরি হয়।অথচ এ বাস্তব সত্যটি ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
“তার (মৌমাছির) পেট থেকে রকমারী রংয়ের মধু বের হয়,যাতে রয়েছে মানুষের চিকিৎসা।সূরা আন নহল -৬৯
আমরা এখন জানি যে,মধুর চিকিৎসা বৈশিষ্ট্য এবং হালকা পচন প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে।রাশিয়ানরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঘা শুকানোর জন্য মধু ব্যবহার করত।ক্ষত স্থানে আর্দ্রতা থাকে যা থেকে সামান্য কোন টিস্যুই অব্যাহতি লাভ করে।মধুর ঘনত্বের কারণে ক্ষতস্থানে কোন ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মাতে পারে না।
ইংল্যান্ডের নার্সিং হোমের ২২ জন দূরারোগ্য বক্ষ ব্যাধি ও এযেইমার্স রোগীর নাটকীয় উন্নতি হয়।সন্যাসিনী সিস্টার ক্যারোল,মৌচাকে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকল্পে মৌমাছির পেট থেকে উৎপন্ন propolis নামক একটি উপাদান ব্যবহার করায় ঐ রোগীদের উন্নতি হয়।
কেউ যদি বিশেষ কোন গাছের ফলের এলার্জি রোগে ভোগে,তাহলে তাকে ঐ গাছ থেকে আহরিত মধু পান করালে,তার এলার্জি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।মধু ফলের চিনি এবং ভিটামিন k দ্বারা সমৃদ্ধ।মধু,এর উৎস ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কোরআনে বর্ণিত জ্ঞান,কোরআন নাযিলের পরবর্তী কয়েক শতাব্দীতে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন।
পবিত্র কোরাআন মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে নাফীসের ৬০০ বছর আগে এবং পশ্চিমা বিশ্বে উইলিয়াম হারওয়ে কর্তৃত রক্ত চলাচলের ধারণা দেয়ার ১ হাজার পূর্বে,নাযিল হয়েছে।১৩০০ বছর আগে,অন্ত্রনালীতে কি ঘটে,তা জানা যায়।জানা যায় যে,শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হজম বা বিপাকীয় প্রক্রিয়ার লালিত হয়।পবিত্র কোরআন মজীদের এক আয়াতে দুধের উপাদানের উৎসের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে,তা এর সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এ ব্যাপারে কোরআনের আয়াত বুঝতে হলে,আগে জানতে হবে যে,অন্ত্রনালীতে কি কি রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটে এবং সেখান থেকে অর্থাৎ খাদ্যের নির্যাস কি করে একটি জটিল প্রক্রিয়ায় রক্তে প্রবাহিত হয়।রাসায়নিক প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে তা যকৃতের মাধ্যমে সরবরাহ হয়।রক্ত সে গুলোক শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সরবরাহ করে।এর মধ্যে দুধ উৎপাদনকারী স্তন সম্বন্ধীয় গ্রন্থি অন্যমত।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলা যায় যে,অন্ত্রনালীর কিছু সুনির্দ্দিষ্ট নির্যাস,অন্ত্রনালীর দেয়ালের পাত্রে প্রবেশ করে এবং রক্ত প্রবাহের ফলে সে সকল নির্যাস বিভিন্ন অঙ্গে সরবরাহ হয়।
আমরা নিম্নের আয়াতটিতে শারীরতত্ব বিষয়ক বর্ণনার প্রশংসা করতে পারি।
মহান আল্লহ বলেনঃ
“এবং তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তুসমূহের চিন্তা করার বিষয় রয়েছে।আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্তুসমূহের মধ্য থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দুধ যা পানকারীদের জন্য উপকারী।”সূরা আন নাহল-৬৬
আল্লাহ আরো বলেনঃ
“এবং তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তসমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে।আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থিত বস্তু থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে রয়েছে প্রচুর উপকারিতা।তোমরা তাদের কিছুকে ভক্ষণ কর।”সরা আল মুমিনুন-২১
১৪০০ বছর আগে গবাদি পশুর দুধ তৈরির ব্যাপারে কোরআনের বর্ণনা সাম্প্রতিককালে শারীরতত্ব বিদ্যার আবিষ্কারের মতই অভিন্ন।
একদল মুসলিম পণ্ডিত ইয়েমেনের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ শেখ আবদুল মজীদ যিন্দানীর নেতৃত্বে পবিত্র কোরআন মজীদ এবং বিশুদ্ধ হাদীস থেকে ভ্রূণতত্ব সহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করে তা ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন।ভ্রূণতত্ব বলতে বুঝায়,জন্মের পূর্বে মানুষের বিকাশ সম্পর্কিত বিদ্যা।এ ক্ষেত্রে তারা কোরআনের নিম্নোক্ত উপদেশকে সামনে রেখেছেন।
“অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর,যদি তোমাদের জানা না থাকে - সূরা আল নহল -৪৩ -সূরা আল আম্বিয়া -৭
কোরআন এবং হাদীসে ভ্রূণতত্ব সম্প্রর্কিত বর্ণনাগুলোকে একত্রিত করে ইংরেজীতে অনুবাদের পর কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রূণতত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বর্তমান যুগে ভ্রূণতত্বে সর্বোচ্চ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডঃ কেইথ মুরকে সেগুলোর ব্যাপারে মন্তব্য করতে বলা হয়।ডঃ মুর ভালভাবে সেগুলো অধ্যায়নের পা বলেনঃ কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে ভ্রূণতত্ব সম্পর্কে যা এসেছে,ভ্রূণবিদ্যার ক্ষেত্রে আবিষ্কৃত বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে সেগুলোর অধিকাংশের পূর্ণ মিল রয়েছে,কোন বেমিল বা বৈসাদৃশ্য নেই।তিনি কিছু সংখ্যক আয়াতের মর্মের যথার্থতা সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি।তিনি সেগুলোর বক্তব্য সত্য না মিথ্যা বলতে পারছেন না।কেননা সে তথ্যগুলো সম্পর্কে তিনি নিজেও ওয়াকিফহাল নন।আধুনিক ভ্রূণ বিদ্যায় বা লেখায় সেগুলোর কোন উল্লেখ দেখা যায়না।এরকম একটি আয়াত হলঃ
“পড় তোমার প্রভূর নামে,যিনি সৃষ্টি করেছেন।তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।”সূরা আলাক -১-২
আরবী ভাষায় (আরবী )শব্দের অর্থ হল,জমাট রক্ত।এর অপর অর্থ হল,দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে এমন আঠলো জিনিস।যেমন.জোঁক কামড় দিয়ে আটকে থাকে।
ডঃমুর জানেন না যে,প্রাথমিক অবস্থায় ভ্রূণকে কি জোঁকের মত দেখায়?তিনি এটা যাঁচাই করার জন্য এক শক্তিশালী মাইক্রোস্কোফের সাহায্যে ভ্রূণের প্রাথমিক অবস্থা গবেষণা করেন এবং বলেন যে,ভ্রূণের চিত্র দেখতে জোঁকের আকৃতির মত।তিনি এ দু’টোর মধ্যে অদ্ভুত সামঞ্জস্য দেখে অভিভূত হয়ে যান।এবইভাবে,তিনি ভ্রূণতত্ব সম্পর্কে কোরআন থেকে আরো বেশী জ্ঞান অর্জন করেন যা তাঁর জানা ছিল না।ডঃমুর কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত ভ্রণতত্ব সম্পর্কিত ৮০টি প্রশ্নের জবাব দেন।তিনি বলেন,কোরআন ও হাদীসে উল্লেখিত তথ্যগুলো ভ্রূনতত্ব সম্পর্কে সর্বশেষ আবিষ্কৃত তথ্যের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল।তিনি আরো বলেন,আমাকে যদি আজ থেকে ৩০ বছর আগে এ সকল প্রশ্ন করা হত,তাহলে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অভাবে আমি সে গুলোর অর্ধেকেরও উত্তর দিতে পারতাম না।
তিনি সৌদী আরবের দাম্মামে,১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত এক চিকিৎসা সম্মেলনে বলেন,কোরআনে মানুষের বিকাশ সম্পর্কিত বর্ণনার ব্যাখ্যা করার সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।এটা আমার কাছে পরিষ্কার যে,মোহাম্মদের কাছে এ সকল বর্ণনা আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে।কেননা,পরবর্তী বহু শতাব্দী পরেও এর অধিকাংশ জ্ঞান আবিষ্কৃত হয়নি।এর দ্বারা আমার কাছে একথা প্রমাণিত যে,মোহাম্মদ অবশ্যই আল্লাহর নবী।
ডঃকেইথ মুর আগে ‘The Developing Human' নামক একটা বই লিখেছিলেন।কিন্তু কোরআন থেকে জ্ঞান সংগ্রহের পর তিনি তার ঐ বইয়ের ৩য় সংস্করণ প্রকাশ করেন।বইটি একক লেখকের সর্বোত্তম চিকিৎসা বই হিসেবে পুনষ্কার লাভ করে।বইটি বিশ্বের বড় বড় অনেক ভাষায় অনুদিত হয়েছে এবং ১ম বর্ষের মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের জন্য ভ্রূণবিদ্যায় পাঠ্যবই হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
আমেরিকার হিউষ্টনে বেলর কলেজ অব মেডিসিনের ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান ডঃজোয়লিগ সিম্পসন ঘোসণা করেন যে,‘৭ম শতাব্দীতে,বিদ্যমান বৈজ্ঞানিক গৃহীত হয়নি।কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যে,ধর্মের (ইসলামের )সাথে জন্ম সংক্রান্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই।অধিকন্তু ধর্ম অর্থাৎ ইসলাম তার অবতীর্ণ জ্ঞান দিয়ে কিছু প্রচলিত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীকে পথ প্রদর্শন করতে পারে।-------- কোরআনের বর্ণনাগুলো পরবতী শতাব্দী গুলোতে যর্থাথ প্রমাণিত হয়েছে।এর দ্বারা একথার সমর্থন পাওয়া যায় যে, কোরআনের জ্ঞান আল্লাহ প্রদত্ত।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ
অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে।সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।এটা নির্গত হয় মেরুদণ্ড বক্ষপাঁজরের মাঝ থেকে।(সূরা তারেক -৫-৭)
জন্মপূর্ব বিকাশের স্তরে,পুরুষ ও নারীর জনেন্দ্রীয়গুলো,অর্থাৎ পুরুষের অন্ডকোষ এবং নারীর ডিম্বাশয়,কিডনীর কাছে মেরুদণ্ড স্তম্ভ এবং ১১শ ও ১২শ বক্ষপাঁজরের মাঝে বিকশিত হয়।তারপর সেগুলো নীচে নেমে আসে।নারীর ডিম্বাশয় তলপেটে এসে থেমে যায়।
কিন্তু জন্মের আগ পর্যন্ত পুরুষের অণ্ডকোষ উরুর গোড়ার নালী দিয়ে অণ্ডকোষের থলিতে নেমে আসার ধারা অব্যাহত থাকে।এমনকি জনেন্দ্রীয় নীচে আসার পর কৈশোরেও গুলো পেটের বড় ধমনী থেকে স্নায়ু ও রক্ত সরবরাহ লাভ করে।আর সেগুলোর অবস্থান হল মেরুদণ্ড এবং বক্ষপাঁজরের মাঝখানে।রসবাগী নালী এবং শিরাগুলোও একই এলাকার গিয়ে মিলিত হয়।
পবিত্র কোরআন মজীদ কমপক্ষে ১১ জায়গায় মানুষকে নোতফাহ (শুক্র) থেকে সৃষ্টির কথা বলেছে।‘নোতফাহ’ মানে সামান্য পরিমাণ তরল পদার্থ কিংবা পেয়ালার নীচে অবশিষ্ট সামান্য পরিমাণ তরল জিনিস।এ বিষয়ে কোরআন মজীদের নিম্নোক্ত সূরা ও আয়াতে উল্লেখ এসেছেঃ
২২:৫; ২৩:১৩;১৬:৪; ১৮:৩৭; ৩৫:১১; ৩৫:৭৭; ৪০:৬৭; ৫৩:৪৬; ৭৫:৩৭;৭৬:২; ৮০:১৯
সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞান একথা নিশ্চিত করেছে যে,গড়ে ৩ মিলিয়ন শুক্রকীট থেকে ১টি মাত্র শুক্রকীটই ডিম নিষিক্তকরণের জন্য দরকার হয়।এর অপর অর্থ হল উৎক্ষিপ্ত শুক্রকীটের ০.০০০০৩% অংশই কেবল নিষিক্ত করণের জন্য দরকার ।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
“অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।’সূরা আস সাজদাহ - ৮
‘সুলালাহ’শব্দটির অর্থ হল,কোন জিনিসের নির্যাস।আমরা এখন জানি যে,মানুষের দেহে তৈরি কয়েক মিলিয়ন শুক্রকীট থেকে ডিমে প্রবেশকারী একটি মাত্র শুক্রকীটই নিষিক্ত করণের জন্য দরকার।সে কয়েক মিলিয়ন থেকে ১টি মাত্র শুক্রকীটকে কোরআন ‘সুলালাহ’হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘সুলালাহ’শব্দের আরেকটি ভিন্ন অর্থ হল, তরল পদার্থ থেকে সুষম উপায়ে বের বরে আনা।তরল পদার্থ বলতে বুঝায়,শুক্রধারণকারী নারী- পুরুষের বীজ সম্পর্কিত পদার্থ।নিষিক্ত করণ প্রক্রিয়ার আওতায় ডিম ও শুক্রকে সুষম উপায়ে বের করে আনা হয়।
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বলেনঃ
‘আমরা মানুষকে মিশ্রিত নোতফা থেকে সৃষ্টি করেছি।সূরা দাহার -২
এখানে ব্যবহূত ‘নোতফাতুন আমসাজ’ এর অর্থ হল,মিশ্রিত তরল পদার্থ বলতে বুঝায় পুংলিঙ্গ ও স্ত্রী লিঙ্গ জাতীয় উপাদান বা তরল পদার্থ।নারী ও পুরুষের শুক্র মিশ্রিত হওয়ার পর ভ্রূণ তখন পর্যন্ত নোতফা আকারেই বিদ্যমান থাকে।মিশ্র তরল পদার্থ বলতে শুক্রকীট জাতীয় তরল পদার্থকেও বুঝাতে পারে যা বিভিন্ন গ্রহ্নির নিঃসৃত রস থেকে এসে থাকে।
তাই ‘নোতফাতুন আমসাজ’মানে দাঁড়ায়,নারী ও পুরুষের ক্ষুদ্র পরিমাণ মিশ্র শুক্র এবং চারদিকের তরল পদার্থের অংশ বিশেষ।
ভ্রূণের লিঙ্গ শুক্রের আকৃতি দ্বারা নির্ধারিত হয়,ডিম দ্বারা নয়।শিশু পুরুষ লিঙ্গ বা স্ত্রী লিঙ্গ যাই হোক না কেন তা নির্ভর করে xx অথবা xy জাতীয় ৩৩ জোড়া ক্রমোজমের উপর।যদি x বহনকারী শুক্র ডিমকে করে,তাহলে,ভ্রূণ হবে স্ত্রীলিঙ্গ এবং যদি তা y বহনকারী শুক্র হয়,তাহলে,ভ্রূণ হবে পুংলিঙ্গ।এ মর্মে আল্লাহ বলেনঃ
‘এবং তিনিই সুষ্টি করেন যুগল পুরুষ ও নারী।এক বিন্দু বীর্য থেকে যখন স্থলিত করা হয়।সূরা নাজম ৪৫-৪৬
এখানেও ‘নোতফা’শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে,যার অর্থ হল,সামান্য পরিমাণ তরল পদার্থ।আর (আরবী ) মানে ,স্থলিত বা নিক্ষিপ্ত।সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে,‘নোতফা’ দ্বারা শুক্রকেই বুঝানো হয়েছে।কেননা,শুক্রই স্থলিত বা নিক্ষিপ্ত হয়।
আল্লাহ আরো বলেনঃ
“সে কি স্থলিত বীর্য ছিলনা ?অতঃপর সে ছিল রক্তপিণ্ড,অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।” -সূরা কেয়ামাহ - ৩৭-৩৯
এখানে পূনরায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এক ফোঁটা শুক্র যা (আরবী) পুরুষ থেকে নির্গত ও নিক্ষিপ্ত হয় সেটাই ভ্রণের লিঙ্গ নির্ধারন করে ।
পাক ভারত উপমহাদেশের শ্বাশুড়ীরা প্রায়ই নাতী ছেলে কামনা করে এবং নাতিন কন্যা হলে হলে সে জন্য বৌমাকে দোষারূপ করে।আফসুস !তারা যদি জানত যে,লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য পুরুষের শুক্রই দায়ী,নারীর ডিম নয়।যদি তারা দোষারূপ করতেই চায়,তাহলে ,তাদের ছেলেদেরকেই দোষারূপ করা উচিত,বৌ মাদেরকে নয়।কেননা কোরআন এবং বিজ্ঞান উভয়েই লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য পুরূষের শুক্রকেই দায়ী করে।
মহান কুদরতে অধিকারী আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন
‘তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে।সূরা আয যুমার -৬
অধ্যাপক কেইথ মুরের মতে, কোরআনে উল্লেখিত অন্ধকারের তিনটি পর্দা বলতে বুঝায়ঃ
১।মাতৃগর্ভের সম্মুখ দেয়াল
২।জরায়ুর দেয়াল
৩।জরায়ুতে ভ্রূণকে আবৃতকারী গর্ভফুলের আভ্যন্তরীণ অতি পাতলা পর্দা।
আল্লাহ বলেনঃ
“আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি।অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিণ্ডে পরিণত,এরপর সেই মাংসপিণ্ড থেকে হাড় সৃষ্টি করেছি,অতঃপর হাড়কে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি।অবশেষে তাকে এক নতুন সৃষ্টিরূপে দাঁড় করিয়েছি।নিপুণতম সুষ্টির্কতা আল্লাহ কত কল্যাণময় ? সূরা আল মোমিনূন- ১২-১৪
এ আয়াতদ্বয়ে মহান স্রষ্টা বলেন তিনি মানুষকে ক্ষুদ্র পরিমাণ তরল পদার্থ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং একে এক সুরক্ষিত বিশ্রামের স্থানে সংরক্ষিত করেছেন।এ অর্থ বুঝানোর লক্ষ্যে তিনি আরবী শব্দ (আরবী)ব্যবহার করেছেন। জরায়ু সর্বদাই পেছন দিক থেকে মেরুদণ্ড দ্বারা সংরক্ষিত। মেরুদণ্ড আবার পেছনের মাংসপেশী দ্বারা সমর্থিত।তাছাড়া ও ভ্রূণ গর্ভফুলের রস সম্পন্ন গর্ভথলি দ্বারা সংরক্ষিত।এর দ্বারা বুঝা যায় যে,ভ্রূণ একটি সুরক্ষিত স্থানে অবস্থান করে।
এই স্বল্প্ পরিমাণ তরল পর্দাথ পরে (আরবী ) বা মাংশপেশীতে পরিণত হয়।‘আলাকা’শব্দের অর্থ হল,যা আটকে থাকে।ভিন্ন কথায় বলা যায়,এটা যেন ‘জোঁক সদৃশ নির্যাস।’এই উভয় অর্থই বৈজ্ঞানিকভাবে গৃহীত।প্রাথমিক পর্যায়ে,ভ্রূণ দেয়ালে আটকে থাকে এবং দেখতে জোঁকের আকৃতি মনে হয়।আর এটা রক্তচোষা জোঁকের মত আচরণ করে।মূলত তা মায়ের গর্ভফুলের মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ লাভ করে। (আরবী ) শব্দের ৩য় আরেকটি অর্থ হল,রক্তপিণ্ড।গর্ভ রক্তপিণ্ডের স্তরে থাকা অবস্থায় অর্থাৎ গর্ভেব ৩য় ও ৪র্থ সপ্তাহে রক্তপিণ্ডে বদ্ধ থলিতে অবস্থান করে।ফলে,ভ্রূণ রক্তপিণ্ডের আকার গ্রহণ করে এবং একই সময়ে তা জোঁকের আকৃতিও ধারণা করে।কোরআনের জ্ঞানের সাথে বিজ্ঞানের সত্য লাভের জন্য মানুষের চেষ্টাকে তুলনা করা যায়।
১৬৭৭ সালে, সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী হাম এবং লিউওয়েন হোয়েক মাইক্রোষ্কোপ দ্বারা মানবীয় শুক্র কোষ পর্যবেক্ষণ করেন।তারা ভেবেছিলেন যে,শুত্রুকোষ যা ক্ষুদ্রকৃতির মানুষ হিসেবে বিবেচ্য তা নতুন শিশু জন্মের জন্য জরায়ুতে বিকাশ লাভ করে।এটা perforation তত্ব হিসেবে পরিচিত।কিন্তু বিজ্ঞানীরা যখন আবিষ্কার করলেন যে শুক্রের চাইতে ডিম বড়,তখন বিজ্ঞানী ডি গ্রাফ সহ অন্যরা ভাবলেন যে,ডিমের মধ্যে ভ্রূণ ক্ষুদ্রাকৃতিতে অবস্থান করে।পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৮০০ শতাব্দীতে,বিজ্ঞানী মাওপেরটুইস মাতা পিতার দ্বৈত উওরাধিকার তত্ব (theory of biparental inheritence)প্রচার করেন।(আরবী) পরে (আরবী) -য় রূপান্তরিত হয়। মুদগাহ’র অর্থ হল, ১। যা দাঁত দিয়ে চিবানো হয় এবং ২। যা আঠালো ও ছোট এবং যা মুখে দেয়া হয় । যেমন গাম । এই দুটিই ব্যাখ্যাই বৈজ্ঞানিক ভাবে বিশুদ্ধ । অধ্যাপক কেইথ মুর প্লাষ্টার সীল সিল নিয়ে একে ভ্রূণের প্রাথমিক পর্যায়ের আকৃতির মত বানিয়ে দাঁত চিবান এবং একে মুগদায় পরিনত করার চেষ্টা করেন। তিনি এর মাধ্যমে এর সাথে প্রাথমিক পর্যায়ের ভ্রূণের ছবিকে তুলনা করেন। তার চিবানো ঐ প্লাষ্টার সীল somites এর মত দেখা গেল যা মেরুদণ্ডের প্রাথমিক গঠন স্তর।
এই (আরবী) পরবর্তীতে (আরবী) বা হাড়ে পরিনত হয়।বাস্তবেই হাড় কে গোশত বা মাংসপেশী পরানো হয়েছে।আল্লাহ পরে একে অন্য সৃষ্টিতে পরিনত করেন।
অধ্যাপক মশর্অল জনসন যুক্তরাষ্টের একজন খাতনামা বিজ্ঞানী Anatomy dept-এর প্রধান এবং ফিলাডেলফিয়ার থমাস জেফারসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দানিয়েল ইনিষ্টিটিউটের পরিচালক।তাকে ভ্রূণতত্ব সম্পর্কে কোরআনের এই আয়াতের উপর মন্তব্য করার অনুরোধ করা হলে, তিনি প্রথমে বলেনঃ ভ্রূণের পর্যায় গুলো সম্পর্কে কোরআনের বর্ণনা গুলো শুধুমাত্র সমকালের সংঘটিত কোন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা যাবেনা। সম্ভবত মোহাম্মদ (ছঃ) এর নিকট খুবই শক্তিশালী কোন মাইক্রোস্কোপ ছিল। যখন তকে স্মরন করিয়ে দেয়া হলো যে, কোরআন ১৪০০ বছর আগে অবতীর্ণ হয়েছে, আর মাইক্রোস্কোপ আবিস্কার হয়েছে নবী মোহাম্মদ (ছঃ) এর বহু শতাব্দী পর।তখন তিনি হেসে দেন, এবং স্বীকার করেন যে, প্রথম দিকে আবিস্কার মাইক্রোস্কোপ ১০ বারের বেশী সময়ের ক্ষুদ্র জিনিসকে বড় করে দেখতে পারেনী এবং যাও দেখিয়েছে, তাও আবার পরিস্কার ছবি দেখাতে পারেনি।তারপর তিনি বলেন ,মোহাম্মদ (ছঃ) যখন কোরআন পাঠ করেন, তখন তার উপর ঐশী বাণী নাযিল হওয়ার বিষয়ে কোন বিরোধ নেই।
ডঃ কেইথ মুর বলেন বিশ্বে গৃহীত আধুনিক কালের ভ্রূণ বিষয়ক উন্নয়ন স্তর সহজে বোধগম্য নয়।কেননা এতে স্তর গুলোকে সংখ্যাতাত্বিক ভাবে পেশ করা হয়েছে। যেমন , ১ম স্তর ইত্যাদি। কিন্তু কোরআনে বর্ণিত স্তরগুলো পার্থক্য বোধক এবং সহজে এর আকার -আকৃতি চিহ্নিত করা যায়।এইগুলো জন্মপূর্ব বিকাশের বিভিন্ন স্তরের উপর ভিত্তিশীল ও বোধগম্য এবং বাস্তব, বৈজ্ঞানিক ও মার্জিত বর্ণনার অধিকারী।
নীচের উল্লেখিত আয়াতে ও মানুষের ভ্রুণ বিকাশের স্তরগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেনঃ
“সে কি স্থলিত বীর্য ছিল না? অতঃপর সে ছিল রক্তপিণ্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যাস্ত করেছেন।অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।” - সূরা কিয়ামাহ - ৩৭-৩৯
আল্লাহ আরো বলেনঃ
“যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাবে সুবিন্যাস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। তিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে গঠন করেছেন। -সূরা আল ইনফিতার- ৭-৮
আরবী -- এর পর্যায়ে ভ্রূণকে ছেদন করলে এবং এর আভ্যন্তরীণ অংশকে কাটলে দেখা যাবে যে, এর অধিকাংশই গঠিত হয়েছে, কিন্তু কিছু অংশ সম্পূর্ণরূপে গঠিত হয়নি।
অধ্যাপক জনসনের মতে, আমরা যদি ভ্রূণকে পূর্ণ সৃষ্টি হিসেবে বর্ণনা করি , তখর আমরা কেবল যে অংশ সৃজিত হয়েছে তারই বর্ণনা করি, তাহলে যে অংশ সৃজিত হয়নি, আমরা কেবল সে অংশেরই বর্ণনা করি। তাহলে প্রশ্ন জাগে যে, ভ্রূণ কি পূর্ণ না অপূর্ণ সৃষ্টি ?কোরআনের বর্ণনা অপেক্ষা ভ্রূণের উৎপত্তির স্তর সম্পর্কে আরো কোন উত্তম বর্ণনা নেই। কোরআনের নিম্নোক্ত আয়তে ‘আংশিক গঠিত হয়েছে’এবং ‘আংশিক গঠিত হয়নি’বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেনঃ
আমি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, এরপর বীর্য থেকে , এর পর জমাট রক্ত থেকে , এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংস পিণ্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্য ।” -সূরা হজ্জ -৫
আমরা বৈজ্ঞানিক ভাবে জানি যে, বিকাশের প্রাথমিক স্তরে কিছু পার্থক্য মূলক কোষ এবং কিছু অপার্থক্য মূলক কোষ আছে। অর্থাৎ কিছু অঙ্গ তৈরী হয়েছে এবং কিছু অঙ্গ এখনও তৈরী হয়নি।
বিকাশমান মানবিক ভ্রূণের মধ্যে প্রথম যে অনুভূতিটি সৃষ্টি হয় সেটি হল শ্রবন শক্তির অনুভূতি । ২৪ সপ্তাহ পর ভ্রূণ, শব্দ শুনতে পায়।তারপর দৃষ্টি শক্তি হয় এবং ২৮ সপ্তাহ পরে রেটিনা বা অক্ষিপট আলোর গতি সংবেদনশীল হয়। আল্লাহ কোরআন মজীদে বলেনঃ
“এবং তোমাদেরকে দেন কান, চোখ ও অন্তর ।” সূরা সাজদাহ -৯
আল্লাহ আরো বলেনঃ
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে - এভাবে তাকে পরীক্ষা করবো । অতঃপর তাকে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি ।”- সূরা দাহর-২
আল্লাহ আরো বলেনঃ
“তিনি তোমাদের কান, চোখ অন্তঃকরন সৃষ্টি করেছেন, তোমরা খুবই অল্প কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে থাক।” -সূরা আল- মোমেনুন -৭৮
উপরোক্ত আয়াতসমূহের দৃষ্টিশক্তির আগে শ্রবণ শক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বুঝা যায় আধুনিক ভ্রূণ বিজ্ঞানের সাথে কোরআনের বর্ণনায় পরিপূণ্য সামঞ্জস্যপূর্ণ।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
“মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার হাড় সমূহ একত্রিত করব না ? বরং আমি তার আঙ্গুলগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।” -সূরা কেয়ামাহ-৩-৪
কাফেররা প্রশ্ন করে যে,মানুষ মরে গেলে তার হাড় পৃথিবীতে বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন হয়ে যায়।ফলে,কেয়ামতের দিন কিভাবে এসকল লোকদেরকে চিহ্নিত করা হবে ?সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন,তিনি কেবল তোমাদের হাড় - হাড্ডিকে একত্রিক করা নয় বরং তোমাদের আঙ্গুলের ছাপ পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে তৈরি করতে সক্ষম।
ব্যক্তির পরিচয় নির্ধারণের ব্যাপারে কোরআন কেন আঙ্গুলের ছাপ সম্পর্কে কথা বলেছে ? ১৮৮০ সালে স্যার ফ্রান্সিস গোল্ট এর গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আঙ্গুলের ছাপকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।পৃথিবীতে এমন দু’জন ব্যক্তি নেই যাদের আঙ্গুলের ছাপ এক রকম।এমন কি দুই যমজ ভাইয়েরও না।একারণে বিশ্বব্যাপী পুলিশ বাহিনী অপরধীদেরকে চিহ্নিত করার জন্য আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষা করে।
আজ থেকে ১৪০০বছর আগে কে জানত যে প্রত্যেক মানুষের আঙ্গুলের ছাপ স্বতন্ত্র ?অবশ্যই মহান স্রস্টা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ তা জানেনা।
ধারণা করা হয় যে,অনুভূতি ও বেদনার উপলব্ধি মস্তিষ্কের উপর নির্ভরশীল।সাম্প্রতিক আবিষ্কার প্রমাণ করেছে যে,চামড়ার মধ্যে বেদনা অনুভবকারী উপাদান রয়েছে।ঐ উপাদান ছাড়া ব্যক্তি ব্যথা বেদনা অনুভব করতে পারে না।
ডাক্তার যখন আগুনে পুড়ে যাওয়ার ফলে ক্ষত স্থানের চিকিৎসা করেন,তিনি একটি সরু পিন দ্বারা পোড়ার মাত্রার পরিমান পরীক্ষা করে দেখেন।রোগী ব্যথা অনুভব করলে ডাক্তার খুশী হণ।কেননা এর দ্বারা বুঝা যায় যে,ভাসাভাসা পুড়েছে এবং ব্যথা অনুভবকারী উপাদান অক্ষত আছে।পক্ষান্তরে রোগী ব্যথা অনুভব না করলে,বুঝা যায় যে,গভীরভাবে পুড়েছে এবং ব্যথা অনুভবকারী উপাদান নষ্ট হয়ে গেছে।
পবিত্র কোরআন চামড়ার ব্যথা অনুভবকারী উপাদানের কথা সুষ্পষ্টভাবে বলেছে।আল্লাহ বলেন:
“এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নির্দশন সমূহের প্রতি যে সব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে,আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করবো।তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে পুড়ে যাবে,তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে,যাতে তারা আবার আযাবের আস্বাদন করতে থাকে নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী,হেকমতের অধিকারী।”সূরা আননেসা -৫৬
থাইল্যাণ্ডের চিয়াংমাই বিশ্ববিদ্যালয়ের Anatomy বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অধ্যাপক তাগাতাত তিজাসেন চামড়ার ব্যথা অনুভবকারী উপাদানের উপর দীর্ঘ দিন ব্যাপী গবেষণা করেছেন।প্রথমদিকে,তিনি বিশ্বাস করেননি যে,১৪০০ বছর আগে কোরআন এ বিষয়ে কথা বলেছে।তিনি কোরআনের এই আয়াতের অনুবাদ পরীক্ষা করে দেখেন। তিনি কোরআনের আয়াতের এরূপ বৈজ্ঞানিক যথার্থতায় এত বেশী মুগ্ধ হন যে, রিয়াদে অনুষ্ঠিত কোরআন ও সুন্নার বৈজ্ঞানিক নিদর্শন বিষয়ক ৮ম সম্মেলনে প্রকাশ্যে ঘোষণো করেন।
“আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল।”
কোরাআনে বর্ণিত বৈজ্ঞানিক সত্যগুলোকে সমকালে সংঘটিত কোন ঘটনা বলে অভিহিত করা সাধারণ জ্ঞান এবং সত্যিকার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিপস্থী।মূলতঃকোরআনের আয়াতসমূহের বৈজ্ঞানিক যথার্থতা কোরআনের এই উন্মুক্ত ঘোষণার নিশ্চয়তা দেয়ঃ
“এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শন প্রদর্শন করবো পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে;ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে,এ কোরআন সত্য।আপনার রব বিষয়ে সাক্ষ্যদাতা এটা কি যথেষ্ট নয় ?”সূরা হা মীম সাজদা -৫৩
আল্লাহ আরো বলেনঃ
“নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং দিন ও রাতের পরিবর্তনের মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।সূরা আলে ইমরান -১৯০
কোরআনের বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্য পরিষ্কার প্রমাণ যে,এটা ঐশী গ্রহ্নে।১৪০০ বছর আগে,কোন মানুষের পক্ষে এরূপ বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি সম্বলিত কোন বই লেখা সম্ভব নয়।
যাই হোক,কোরআন কোন বিজ্ঞান গ্রহ্ন নয়,রবং নিদর্শন গ্রহ্ন।এ সকল নিদর্শন মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো এবং প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে বাস করার উদ্দেশ্য উপলব্ধি করার আহ্বান জানায়।কোরআন সত্যিকার অর্থেই আল্লাহর পয়গাম যিনি গোটা বিশ্বের স্রষ্টা ও রক্ষক।এতে আল্লাহ একত্ববাদের পয়গাম রয়েছে যার প্রতি সকল নবী রাসূলগন দাওয়াত দিয়েছেন।তাদের মধ্যে আদম (আঃ),মূসা (আঃ),ঈসা (আঃ) এবং মোহাম্মদ (সঃ) অন্যতম।
‘কোরআন ও আধুনকি বিজ্ঞান-এবিষয়ের উপর বহু বই পুস্তক তৈরি হয়েছে এবং আরো অনেক গবেষণা চলছে।ইনশাআল্লাহ,এই গবেষণা মানব জাতিকে আল্লাহর বাণীর নিকটবর্তী করবে।এ পুস্তিকায় কোরআনের অল্প কয়েকটি বৈজ্ঞানিক সত্যই তুলে ধরা হয়েছে।আমি বিষয়টির উপর পূর্ণ ইনসাফ করতে পেরেছি বলে দাবী করিনা।
অধ্যাপক তেজাসেন কোরআনের একটি মাত্র আয়াতের শক্তির কারনে ইসলাম গ্রহণ করেছেন।কোরআন ঐশী গ্রহ্ন কিনা এবিষয়ে কেউ হয় তো ১০টি নিদর্শন আবার কেউ হয়তো ১০০টি নিদর্শনের প্রয়োজন অনুভব করতে পারে।আবার কেউ ১ হাজার নিদর্শন দেখেও ইসলাম গ্রহন করবেনা।কোরআন এ জাতীয় বদ্ধ অন্তরের নিন্দা করে বলেছেঃ
‘তারা বধির,বোবা ও অন্ধ,তারা কখনও ফিরে আসবেনা।সূরা আলবাকারা-১৮
পবিত্র কোরআন ব্যক্তি ও সমাজের জন্য পরিপূণ জীবন ব্যবস্থা।কোরআনী জীবন ব্যবস্থা মানুষের অজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি বিভিন্ন মতবাদ থেকে অনেক উন্নত।স্রষ্টার চাইতে অপেক্ষাকৃত ভাল হেদায়েত কে দিতে পারে?
আমি দোআ করি,আল্লাহ যেন এই সামান্য প্রচেষ্টাটুকু কবুল করেন।আমি তাঁর ক্ষমা ও হেদায়াত প্রার্থী।